আসলামের বিরুদ্ধে মামলা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থেকে: বিএনপি

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থেকে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2016, 10:01 AM
Updated : 27 May 2016, 03:01 PM

শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই মামলার প্রতিবাদ জানান।

তিনি বলেন, “রাজনীতির ষড়যন্ত্রের ‘কন্সপিরেসি থিওরি’ আবিষ্কার করে আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেওয়া হয়েছে। সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিলো আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। আর যারা ইসরায়েলের সাফাদি এন মেন্দিকে ভারতে নিযে আসলো, তাদেরকে একটি বন্ধুদ্রোহী প্রতিবাদও করলো না।

“আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় রিজভী বলেন, “আসলাম চৌধুরী যেমন রাজনীতিবিদ, তেমনি তিনি একজন ব্যবসায়ী। তিনি প্রায়শ ভারতে যান। সেখানে তার বহু ব্যবসায়ী বন্ধু-বান্ধব আছেন।

“যে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা যাকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছেন, তারাও বিবৃতি দিলেন, ভাই তিনি মোসাদের লোক না। উনি লিকুদ পার্টির নেতা থিংক ট্যাংক, জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি। মাঝে মধ্যে আমরা তাকে আমন্ত্রণ দিয়ে নিয়ে আলোচনা করি। তাকে একবার না একাধিকবার আমন্ত্রণ করে নিয়ে এসেছি।”

ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য সাফাদি এন মেন্দির সঙ্গে মিলে বাংলাদেশে ‘সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগে পুলিশ বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে।

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২০/বি (রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র), ১২১/এ (রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ষড়যন্ত্র) এবং ১২৪/এ (রাষ্ট্রদ্রোহ) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী প্রথম ধারায় সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড, বাকি দুই ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

চট্টগ্রামের নেতা আসলাম চৌধুরীকে মাস খানেক আগে বিএনপির নতুন কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে মনোনীত করেন খালেদা জিয়া।

আর লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের উপমন্ত্রী এম কে আয়ুব কারার একজন সাবেক উপদেষ্টা। তিনি নিজের নামে মেন্দি এন সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস প্রতিষ্ঠানটি চালান।

সম্প্রতি ভারতের এক সম্মেলনে তাদের দুজনের সাক্ষাতের ছবি ও খবর গণমাধ্যমে এলে আলোচনার সূত্রপাত হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে বিএনপি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে মিলে ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।

ইসরায়েল কিংবা মোসাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আসলামের ওই সফর ছিল ‘ব্যক্তিগত’। তবে আসলাম বা সাফাদি কেউই ভারতে ওই সাক্ষাতের খবর অস্বীকার করেননি।

গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মেন্দি এন সাফাদি যে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা, তা তিনি সে সময় ‘জানতেন না’ ।

আর সাফাদিও বিবিসির বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আসলামের সঙ্গে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে দেখা হলেও তাদের মধ্যে ‘কোনও গোপন বিষয়ে’ কথা হয়নি।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই গত ১৫ মে ঢাকা থেকে আসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সেদিন রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, বিএনপি নেতা আসলাম সম্প্রতি ভারতে ‘ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একজন সদস্যের সঙ্গে’ বৈঠক করেন। তিনি ‘সরকার উৎখাতে ইসরায়েলের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে’ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

এর বিরোধিতায় আসলামের আইনজীবীরা সেদিন বলেন, এই বিএনপি নেতা ‘চিকিৎসার প্রয়োজনে’ পাঁচ দিনের জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এক ‘দাওয়াত অনুষ্ঠানে’ যান। ইসরায়েলের কয়েকজনের সঙ্গে সেখানেই তার ‘দেখা’ হয়। সেই ছবিই গণমাধ্যমে এসেছে। আসলামের সঙ্গে কোনো বৈঠক তাদের হয়নি।

সাত দিনের ওই রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করে নাশকতার দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আরও ১০ দিন করে হেফাজতের আবেদন করে পুলিশ। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য ৩০ মে দিন রেখেছে।