আসলামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন দলের এক সদস্যের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশে ‘সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2016, 02:02 PM
Updated : 26 May 2016, 02:02 PM

নিয়ম অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশান থানায় এই মামলা করেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রব্বানি।

গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২০/বি (রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র), ১২১/এ (রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ষড়যন্ত্র) এবং ১২৪/এ (রাষ্ট্রদ্রোহ) ধরায় মামলাটি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী প্রথম ধারায় সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড, বাকি দুই ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

‘টাকার বিনিময়ে চুক্তি’

থানায় মামলা হওয়ার আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠান শেষে পুলিশ প্রধান একেএম শহীদুল হক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এ মামলা করার অনুমতি পাওয়ার কথা জানান। 

তিনি বলেন, “ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতাদের কাছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে অজনপ্রিয় করে একটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে চেয়েছিল। এ ধরনের প্রমাণ আমরা প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছি। আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে।”

আইজিপি দাবি করেন, ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে ‘চুক্তি করার কথা’ আসলাম পুলিশের  জিজ্ঞাসাবাদে ‘স্বীকার করেছেন’।

“সেই নেতা এই সরকার উৎখাতে ষড়যন্ত্র করবে; আসলাম তাকে টাকা দেবে- তা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।”

শহীদুল হক বলেন, ইসরায়েলের সেই রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ‘সম্পর্ক আছে’। আর তার সঙ্গে আসলাম চৌধুরী ‘একাধিক মিটিং’ করেছেন ভারতে।

“জিজ্ঞাসাবাদে সে যেসব তথ্য উপাত্ত দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়েছে, সে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সস্পৃক্ত ছিল।”

জিজ্ঞাসাবাদে বিএনপির অন্য কারও নাম এসেছে কি না জানতে চাইলে পুলিশ প্রধান বলেন, তাদের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

“তার সঙ্গে কিছু সহকর্মী ছিল। তাদের গ্রেপ্তার করতে পারলে পুরো তথ্য পাওয়া যাবে। তখন বোঝা যাবে কারা কারা এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।”

ভারতে সাক্ষাৎ

চট্টগ্রামের নেতা আসলাম চৌধুরীকে মাস খানেক আগে বিএনপির নতুন কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে মনোনীত করেন খালেদা জিয়া।

আর লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ইসরায়েলের বর্তমান সরকারের উপমন্ত্রী এম কে আয়ুব কারার একজন সাবেক উপদেষ্টা। তিনি নিজের নামে মেন্দি এন সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস প্রতিষ্ঠানটি চালান।

সম্প্রতি ভারতের এক সম্মেলনে তাদের দুজনের সাক্ষাতের ছবি ও খবর গণমাধ্যমে এলে আলোচনার সূত্রপাত হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে বিএনপি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে মিলে ‘ষড়যন্ত্র’ করছে।

তবে ইসরায়েল কিংবা মোসাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, আসলামের ওই সফর ছিল ‘ব্যক্তিগত’।

আসলাম বা সাফাদি কেউই ভারতে ওই সাক্ষাতের খবর অস্বীকার করেননি।

গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মেন্দি এন সাফাদি যে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির নেতা, তা তিনি সে সময় ‘জানতেন না’ ।

আর সাফাদিও বিবিসির বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আসলামের সঙ্গে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে দেখা হলেও তাদের মধ্যে ‘কোনও গোপন বিষয়ে’ কথা হয়নি।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই গত ১৫ মে ঢাকা থেকে আসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সেদিন রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, বিএনপি নেতা আসলাম সম্প্রতি ভারতে ‘ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একজন সদস্যের সঙ্গে’ বৈঠক করেন। তিনি ‘সরকার উৎখাতে ইসরায়েলের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে’ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

এর বিরোধিতায় আসলামের আইনজীবীরা সেদিন বলেন, এই বিএনপি নেতা ‘চিকিৎসার প্রয়োজনে’ পাঁচ দিনের জন্য দিল্লি গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এক ‘দাওয়াত অনুষ্ঠানে’ যান। ইসরায়েলের কয়েকজনের সঙ্গে সেখানেই তার ‘দেখা’ হয়। সেই ছবিই গণমাধ্যমে এসেছে। আসলামের সঙ্গে কোনো বৈঠক তাদের হয়নি।

সাত দিনের ওই রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করে নাশকতার দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আরও ১০ দিন করে হেফাজতের আবেদন করে পুলিশ। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য ৩০ মে দিন রেখেছে।