‘সেলিমকে বাঁচাতে লাঞ্ছিত শিক্ষকের পক্ষে মন্ত্রী-এমপিরা’

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বললেও তা সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে বাঁচাতেই বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতা ফিরোজ আহমেদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2016, 01:32 PM
Updated : 26 May 2016, 02:46 PM

বৃহস্পতিবার দুপুরে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি সেলিম ওসমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন সত্য।

“কিন্তু এই সেলিম ওসমান কে? প্রধানমন্ত্রী নিজেই ওসমান পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাহলে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের এই অবস্থান আসলে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সেলিম ওসমানকে বাঁচানোর জন্যই।”

শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় তোপের মুখে থাকা সেলিম ওসমানের ভাই তৎকালীন সাংসদ নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাবের আলোচনায় আওয়ামী লীগ গঠনে ওসমান পরিবারের ভূমিকার কথা স্মরণ করে তাদের পাশে থাকার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাজনৈতিকভাবে ‘হেয়’ করতে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে দাবি করে সে বিষয়ে জনগণকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী।

নাসিম ও সেলিম জাতীয় পার্টি থেকে  সাংসদ হলেও তার আরেক ভাই শামীম ওসমান নারায়ণঞ্জে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সাংসদ। তাদের দাদা খান সাহেব ওসমান আলী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠকদের অন্যতম। তার বাড়িতেই দল গঠনের প্রথম বৈঠক হয়।

(ফাইল ছবি)

তবে সাম্প্রতিককালে তানভীর মাহমুদ ত্বকী হত্যাসহ নারায়ণগঞ্জের বেশকিছু ঘটনার পেছনের কারিগর হিসেবে স্থানীয় অনেকেই ওসমান পরিবারের সদস্যদের দায়ী করে থাকেন, বিভিন্ন সময়ে যা গণমাধ্যমেও আলোচিত হয়।

গত ১৩ মে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে একদল লোক মারধরের পর পরে তাকে কান ধরিয়ে উঠ-বস করান সেলিম ওসমান। পরে তাকে সাময়িক বহিষ্কারও করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদের মধ্যে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে শ্যামল কান্তিকে চাকরিতে পুনর্বহালের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আর এ ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক প্রতিবাদে সাংসদ সেলিমের নৈতিক পরাজয় হয়েছে মন্তব্য করে তাকে লজ্জা থাকলে সংসদে না যাওয়ার আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

এ ধরনের বক্তব্য বিবৃতির মাধ্যমে সরকারের মন্ত্রীরা শিক্ষক শ্যামল কান্তির পক্ষে অবস্থান নিলেও সাংসদ সেলিমের শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে না বলে সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাম মোর্চার নেতা ফিরোজ আহমেদ।

তিনি বলেন, “সরকারের মন্ত্রীরা (শিক্ষকের) পক্ষে যেহেতু অবস্থান নিয়েছেন- বলেছেন লজ্জা থাকলে (সেলিম ওসমানের) সংসদে না যেতে, তাহলে তাকে কেন কোনো শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। সেলিম ওসমানকে কেন সংসদ সদস্য থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে না।”

এসময় বাম মোর্চার সদ্য বিদায়ী সমন্বয়ক ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের নেতা আব্দুস ছাত্তার বলেন, “সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির এমপি হলেও ওসমান পরিবারের সদস্য হওয়ায় তার দায় প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের উপরই। তাই এই ব্যাপারে সরকারের মন্ত্রীদের অবস্থান ব্যাপক থাকলেও তা দেখানো মাত্র।

“সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করার সময় দেখেন না তার চার পাশে যারা থাকে- সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।”

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “গতকাল ওবায়দুল কাদের যে বলেছেন হেফাজতের সমাবেশের দিন প্রগতিশীল বাম দলগুলো কোথায় ছিল?

“আমি বলব, হেফাজত নিয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের নেতা হাছান মাহমুদসহ অনেকই এই হেফাজতীদের পৃষ্টপোষকতা করছেন। সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেভাবেই হোক না কেন।”

এ সময় সাংবাদিকরা হেফাজত বিষয়ে বাম মোর্চার ‘স্পষ্ট অবস্থান’টি সুস্পষ্ট করার আহ্বান জানালে গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, “হেফাজতের আন্দোলনের সময় আমরা বলেছি- যাতে তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া না হয়।

“এমন ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে সমাবেশ করতে দেওয়া যাবে না। তবুও তাদেরকে এখানে সমাবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। এটাও যেমন আমাদের কাম্য ছিল না, তেমনিভাবে যেভাবে তাদের সরানো হয়েছে সেটাও আমাদের কাম্য ছিল না।”

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার বক্তব্য ও আন্দোলনের দাবিনামা তুলে ধরার জন্য এই সম্মেলন করে বাম মোর্চা।

সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে ‘বাংলাদেশ ও দেশের জনগণ তার রাজনৈতিক ইতিহাসে আবারও এক গভীর সংকটকাল পার করছে’ মন্তব্য করে জনগণের নূন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকার নানা দিক থেকে আক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মোর্চার ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক মানস নন্দী।

তিনি আরও বলেন, “ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অভিযোগে নারায়ণগঞ্জে মহাজোট সরকারের এমপি স্কুল শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করে ধর্মান্ধ শক্তিকে উৎসাহ যুগিয়েছেন।”

সংবাদ সম্মেলন থেকে দমন-পীড়ন, অপহরণ, গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ, দেশের শ্রমিক-কর্মচারী বাঁচাতে ন্যূনতম মজুরী ১৬ হাজার টাকা করাসহ ১১ দফা দাবিতে ৩ জুন বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।