জঙ্গিদের হাতে হত্যায় দায় চাপানো হচ্ছে বিএনপির ওপর: ফখরুল

বাংলাদেশে মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অধিকারকর্মী হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ‘সঠিক ও নিরপেক্ষ’ তদন্ত না করে দেশে জঙ্গিবাদের সুযোগ সৃষ্টির ‘চক্রান্ত’ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2016, 03:47 PM
Updated : 25 May 2016, 05:35 PM

বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টে উদ্বেগ প্রকাশ করার বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “আমরা সারা বিশ্বের রাজনীতিতে দেখতে পারছি- জঙ্গিবাদ যেখানে সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে গোটা জাতিকে তার চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। জঙ্গিবাদের সুযোগ নিয়ে গোটা দেশ-জাতিকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে, সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করে দেওয়া হচ্ছে, সমস্ত সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করে ফেলা হচ্ছে।

“আজকে বাংলাদেশে এই ধরনের একটা ঘটনার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, . . . সেই চক্রান্ত চলছে। সেদিকে না গিয়ে, সরকার এ বিষয়ে কোনো সঠিক গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত না করে শুধুমাত্র বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। এটার অর্থই হচ্ছে তারা আসল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এইসব কাজ করছে।”

মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অধিকারকর্মী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুততার সঙ্গে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত করে সঠিক অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল বলেন, “তা না হলে দেশে যেকোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে; তার জন্য সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।”

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)।

সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টে আলোচনার বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

“বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের তরফ থেকে বিদেশিদের কাছে যে কথাটা বলা হচ্ছে- বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে বিএনপি মদদ দিচ্ছে, প্রশ্রয় দিচ্ছে।”

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‍“প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়ে কথা বলেন, তখন কী তদন্ত কর্মকর্তার স্বাধীনতা থাকে, থাকে না। এটা মেন্ডেটারি হয়, বিএনপিকে এর সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।”

ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা মনে করি সমস্যা আরও গভীরে। ইতালি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলাম, একটা গভীর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে।

“আমরা তখনই এ ব্যাপারে একটা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটা আন্দোলন তৈরির কথা বলেছিলাম,  যাতে এখানে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে।”

‘সংকট’ থেকে উত্তরণে সবার ঐক্য চেয়ে বিএনপি নেতা ফখরুল বলেন, “আজকে আমরা এক কঠিন সময় পার হচ্ছি, অত্যন্ত দুরূহ সময় অতিক্রম করছি। এই সময় যদি আমরা সঠিকভাবে না চলি, এই সময় যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ না থাকি, এই সময় যদি আমরা নিজেদের মধ্যে অযথা দলাদলি-কোন্দল সৃষ্টি করি, তাহলে সত্যিকার অর্থে আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব।”

এই অপশক্তির মোকাবেলায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আস্থা রেখে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান দলটির এই মহাসচিব।

বিএনপি চেয়ারপারস খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৫টি মামলাকে ‘মিথ্যা’ দাবি করে এর সমালোচনা করে ফখরুল।

“বিএনপির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে; সেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে প্রেসিডেন্ট জিয়ার নাম মুছে ফেলা। দেশপ্রেমিকরা যাতে মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বিএনপিকে ধবংস করার জন্য।

“দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই- দেশনেত্রীকে কিভাবে অন্তরীণ করা যায়। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অনেক মামলা দিয়েছে। আমাদের এমন কোনো নেতাকর্মী নেই, যাদের বিরুদ্ধে ৬০/৭০ টা মামলা নেই। এমনও নেতা আছেন যাদের বিরুদ্ধে ১৮০/১৮০টা মামলা দেয়া হয়েছে। যা কিছু ঘটবে- সব কিছু বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেয়।”

কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কবির কথা আমাদের আন্দোলিত করে, উজ্জীবিত করে- অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাহস যোগায়। সেজন্য কবি নজরুল ইসলামকে আমাদের বার বার স্মরণ করতে হবে।”

জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকীতে তাকে নিয়ে সংবাদ ও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা আয়োজনে টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকাসহ দেশের গণমাধ্যমগুলো ‘কৃপনতা’ দেখিয়েছে মন্তব্য করে বিষয়টির সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।

“আজকে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকীর সংবাদটি বিভিন্ন পত্রিকায় একটু করে লেখা হয়েছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক। কোনো পত্রিকায় তার জন্য কোনো বিশেষ ক্রোড়পত্র নেই। তার জীবনীর ওপর কোনো লেখা ও প্রবন্ধ নেই। অথচ তিনি আমাদের জাতীয় কবি। কী লজ্জার, কী ধিক্কার।

“টেলিভিশনগুলোতে দেখবেন একই অবস্থা, কোনো অনুষ্ঠান নেই। কেন কবির প্রতি এই অবহেলা। যে মানুষটির কবিতা আমাদেরকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাহস যুগিয়েছিল, যার কবিতা আমাদের আন্দোলিত করেছিল, কেন এভাবে আজকে তাকে অবহেলা করছি? এর জবাব সরকারকে অবশ্যই দিতে হবে।”

জাসাস সভাপতি এম এ মালেকের সভাপতিত্বে আলোচনায় গণস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আবদুল হাই শিকদার, বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুস সালাম, ছাত্র দলের রাজিব আহসান, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক মনির খানসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভার পর জাসাস শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ফাইল ছবি)