জেলখানায় ফের ‘মহামিলনের’ শঙ্কা গয়েশ্বরের

সেনা সমর্থিত বিগত তত্ত্ববধায়ক সরকার আমলের মতো শীর্ষ সব রাজনীতিককে ‘অচিরেই’ ফের জেলে যেতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2016, 01:17 PM
Updated : 23 May 2016, 04:57 PM

সোমবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এই সরকার দেশটাকে যেদিকে নিচ্ছে, তাতে আমার মনে হয়, আমাদের হয়ত জেলে যেতে হবে নিকট সামনে। কিছুদিন পর সেই জেলখানায় উনাদের (ক্ষমতাসীন) সঙ্গে আমাদের দেখা হবে। আমার মনে হয়, জেলখানায় আমরা একসঙ্গেই এনজয় করব।

“... শেখ হাসিনা যাদের পরামর্শে যা যা করিতেছেন, ইনু সাহেবরা যা যা উস্কানি দিতেছেন, তাতে আমরা মনে হয়, আবার একটা মহামিলন হবে। হয়ত আমরা আগে গিয়ে জেলখানা পরিষ্কার করব। উনারা একটু পরে যাবেন, উনাদের আমরা রিসিভ করব। তবে সবাইকে যেতে হবে।”

২০০৭ সালের জানুয়ারির ১১ তারিখ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণ করে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ফখরুদ্দীন আহমেদের সরকার।

জরুরি অবস্থা জারি করে দুর্নীতি দমন অভিযানের কথা বলে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল শীর্ষ রাজনীতিকদের। সংকুচিত করা হয়েছিল বাক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা।

সেসময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

প্রয়াত সাংবাদিক সাদেক খান স্মরণে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট’ এর উদ্যোগে এই সভা হয়।

পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার আবদুল জাব্বার খানের বড় ছেলে সাদেক খান (৮৩) গত সোমবার মারা যান।

রাজনৈতিক দর্শনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অনুসারী সাদেক খানের সঙ্গে বিএনপির সখ্য ছিল। ২০১২ সালে ‘বাংলাদেশ গণশক্তি দল’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন তিনি।

সভায় ১/১১ এর সময়ে শীর্ষ রাজনীতিকদের কারাবন্দি থাকার স্মৃতিচারণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর বলেন, “ওই সময়ে জেলখানায় মতিউর রহমান নিজামী (যুদ্ধাপরাধে ফাঁসি হওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির) নামাজে ইমামতি করতো। শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ (আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) অন্যরা তার পেছনে নামাজ পড়তেন।

“উনারা একসঙ্গে বসতো, কোরআন তেলোয়াত করতো, তরজমা করতো। যারা ওই সময়ে জেলখানায় গেছেন, তারা সবাই জানেন। তার মানে কী? সাপ, ব্যাঙ, বেজি সব একসঙ্গে থাকতো।”

স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ‘জাতির সতীত্ব’ অভিহিত করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “এই সতীত্বর ওপর যেভাবে আঘাত আসছে, তাতে আমরা আজকে একে ধরে রাখতে পারছি না। তাই সবাইকে বলব, আমরা যদি আমাদের সাহসিকা দিয়ে লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিশীল হই, তাহলে বুলেট-বোমা কোনো কিছু টিকবে না। প্রত্যেকটা ফেরত যাবে, আমাদের ছুঁইতে পারবে না।

“আর আমরা যদি বাঁচার জন্য পলায়নপর হই, আমরা বাঁচতে পারব না। আমরা যদি সরকারকে আকার-ইঙ্গিতে সন্তুষ্ট করাইয়া বাঁচতে চাই, আমরা বাঁচতে পারব না। পালাক্রমে আমাদের জেলে যেতে হবে, নানা শাস্তি ভোগ করতে হবে।”

বিএনপিঘনিষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান ও দলের যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় গণমাধ্যমের ‘ভূমিকার’ সমালোচনা করে তিনি বলেন, “দখলের মধ্য দিয়ে সবই আজ দখল হয়ে গেছে। গণমাধ্যম এখন গণমাধ্যমের পর্যায় নেই। আওয়ামী মাধ্যম না হলে গণমাধ্যমে নামটা লেখানো যায় না। অর্থাৎ সরকারের অপকর্ম লেখা যাবে না।

“কোনো পত্রিকায় সরকারের বিরুদ্ধে লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে যা যা করার, ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে বিএনপির বিরুদ্ধে লেখা, বিএনপির সমালোচনা হয় হর-হামেশা। তাই যত দোষ বিরোধী দলের। সরকারের দোষ তো লেখার ক্ষমতা গণমাধ্যমের নেই।”

সভায় সাদেক খানের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির এই নেতা। 

সংগঠনের সভাপতি সাহাদাত হোসেন সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত সাংবাদিকের ছোট বোন সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ ও ব্যারিস্টার পারভেজ আহমেদ বক্তব্য রাখেন।