বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা চাননি, চেয়েছিলেন জিয়া: খালেদা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2016, 06:21 PM
Updated : 21 May 2016, 07:45 PM

বরং তার স্বামী জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

দৃশ্যত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পুত্র তারেক রহমানের বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় একথা বললেন মা খালেদা।

বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের দল নয় বলেও দাবি করছেন বিএনপি নেত্রী।

এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে ছিলেন ‘আরাম-আয়েশে’।

বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে শনিবার রাতে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রতিনিধিদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব বলেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা ঘোষণা করার সাহস পায়নি। স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন জিয়াউর রহমান, যুদ্ধ করেছে এদেশের মানুষ। আর তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আরাম-আয়েশ করেছে। সেই দল মুক্তিযুদ্ধের দল হয়েছে। যুদ্ধ না করলে যোদ্ধা হয় কী করে? মুক্তিযুদ্ধের দল বিএনপি। জিয়াউর রহমান স্বয়ং যুদ্ধ করেছেন।”

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “যার স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল তিনি (শেখ মুজিবুর রহমান) তো পাইপ-টাইপ নিয়ে চলে গেলে পাকিস্তানে। সেখানে আরামেই দিন কাটালো।

“তার দলের নেতা বার বার বলেছিলেন রেকর্ড করে দিয়ে যান। তিনি সেটাও করেননি। তিনি সব সময় চেয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা চেয়েছেন, স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন জিয়াউর রহমান।”

বর্তমানে দেশে মানুষের কথা বলার ‘অধিকার নেই’ অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “কেউ কথা বললেই সে মামলা খাবে, রাজাকার হয়ে যাবে। আর না হলে সন্ত্রাসী বানিয়ে তার ওপর অত্যাচার চালাবে।”

সরকারের ‘অপকর্ম ও অপশাসন’ জনগণের কাছে তুলে ধরতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “ওই টাকা হ্যাকাররা নেয়নি, চুরি হয়েছে, লুট করা হয়েছে। ফিলিপাইনে ক্যাসিনোতে সেই টাকা নিয়ে হালাল করেছে।”

কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “তার ছেলের একাউন্টে যে তিনশ মিলিয়ন ডলার অর্থ আছে- সে কথাটা সকলে জানে না, এটা সকলকে বলতে হবে তো। এটা কার টাকা? জনগণের টাকা। আর যদি তার টাকা হয়, সে কীভাবে পেল- তা বলতে হবে তো, হিসাব দিক। জবাব দিক সে কীভাবে সেই টাকা আয় করেছেন, তা হলে সেটা পরিষ্কার হবে।

“এটা তো ছোট খবর আমরা পেয়েছি। আরও যে বড় বড় কত কী করেছে, একদিন হয়তো জানা যাবে। দেশ তো শেষ যাচ্ছে তা বুঝতে হবে। এভাবে সব নিয়ে তারা চলে যাবে। আর আমরা শুধু চেয়ে থাকব খোলা আকাশ দিকে, তা তো হতে পারে না।”

সম্প্রতি বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যার কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, “কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ আজ নিরাপদ নেই। আগে কখনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ হত্যা হয়নি। এই প্রথমবার তারা এটা শুরু করেছে।”

সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে কেউ ধরা পড়েনি দাবি করে তিনি বলেন, “কারণ হত্যাকারী তাদের দলীয় লোক। সেজন্য ধরা পড়েনি।”

বর্তমানে ছাত্রলীগ-যুবলীগের জন্য কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

‘এতোদিনে বুঝেছেন ট্যাংক লাগবে’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার রকিব উদ্দীন আহমদকে ‘বোবা-কালা’ আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেছেন, শুধু ‘অবস্থা খারাপ’ হলেই তিনি কথা বলেন।

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “এদেশের নির্বাচনের কোনো পরিবেশ আছে বা এটাকে নির্বাচন হওয়া বলবেন? কীভাবে ভোটকেন্দ্রে, যা আমরা অতীতে কখনো দেখি নাই, পুলিশ কিংবা সরকারি অফিসিয়ালরা ব্যালট পেপারে সিল মারে। ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে। আর আওয়ামী লীগের লোকেরা অস্ত্র নিয়ে চলছে।”

বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দিতে দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, “সকলের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েও একলা থাকবে শুধু। কোনো দল থাকবে না। কাউকে থাকতে দিবে না। এভাবে তারা চলছে। এটা হতে পারে না। এটা গণতন্ত্র নয়।”

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে এক সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, “এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কালকে কী বলছেন, নির্বাচন করতে গেলে ট্যাংক লাগবে। এতোদিনে  উনি বুঝেছেন ট্যাংক লাগবে।

“সেজন্যই তো আমরা বলেছিলাম, এই স্থানীয় সরকার নির্বাচন না হলেও জাতীয় নির্বাচন যেটা হয়, সেটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। তাহলে সেখানে সেনাবাহিনী ট্যাংক চালনা করে, অন্যরা তো কেউ করে না।”

অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে সুমঙ্গল ভিক্ষু, দয়া নন্দ ভিক্ষু, শান্তি রক্ষিত থেরসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্যের শুরুতে খালেদা জিয়া বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের সাফল্য কামনা করেন।

নেতা-কর্মীদের ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

দলের সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, সাচিং প্রু জেরী, সুশীল বড়ুয়া, প্রথীন চন্দ্র চাকমা, সনথ তালুকদার ও চন্দ্র গুপ্ত বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা রুহুল আলম চৌধুরী, গোলাম আকবর খন্দকার, মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও রবীন্দ্র লাল চাকমা উপস্থিত ছিলেন।