আদালতের প্রতি ‘আস্থা বেড়েছে’ বিএনপির

বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাই কোর্টের রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 May 2016, 08:18 AM
Updated : 6 May 2016, 08:30 AM

এই রায়ের মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালতের প্রতি ‘আস্থা বাড়ার’ পাশাপাশি ‘ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী’ হয়ে ওঠার কথা বলেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গতকাল মাননীয় হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছেন, এটি ঐতিহাসিক, মনুমেন্টাল। এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগের মর্যাদা বৃদ্ধি পেল। উচ্চ আদালত সম্পর্কে জনগণের আস্থা আরও দৃঢ়তর হল।

“আমরা মনে করি, এই রায়ের মধ্য দিয়ে আবারও ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা মানুষের মধ্যে সুগভীরভাবে নিশ্চিত হল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এই ঐতিহাসিক রায়কে সাধুবাদ জানাচ্ছে। জনগণ, দেশের সুশীল সমাজ, সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আজকে এই বিপন্ন সময়ে, দুঃশাসনে, এই রায়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের আশাবাদ জেগে উঠল ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে।”

একটি রিট আবেদনে দেওয়া রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বিশেষ বেঞ্চ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে।

রায়ে আদালত বলে, “সংসদের মাধ্যমে বিচারকগণের অপসারণ প্রক্রিয়া ইতিহাসের একটি দুর্ঘটনা।”

এই রায়কে সংবিধান পরিপন্থি মন্তব্য করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংসদের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে দেওয়া এই রায় আপিল বিভাগে টিকবে না।

তবে রিজভী বলছেন, “আমি মনে করি, উচ্চ আদালত সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশার প্রতিধ্বনি করে যে রায়টি দিয়েছেন তা যুগান্তকারী।”

বিচারপতিদের অভিশংসন বিষয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ধারা তুলে ধরে রিজভী বলেন, “আপনারা জানেন ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণীত হয়, তখন সংসদের ওপর বিচারপতিদের অসদাচরণের জন্য অভিশংসনের ক্ষমতা ছিল। পরবর্তীতে যখন বাকশাল গঠিত হয়, তখন এটা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়।

“এরপর সমস্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপরে ন্যস্ত করা হল বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা। এটি সকলের দ্বারা সমাদৃত ছিল। কারণ এখানে দলীয় প্রভাবের কোনো সুযোগ ছিল না।”

বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে দেওয়ায় বিরোধিতায় তিনি বলেন, “এতে যে দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকে তারা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে, বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। রাষ্ট্রপতির হাতে থাকলেও তা করতে পারে, কারণ রাষ্ট্রপতিও একটি রাজনৈতিক দলের দ্বারা নির্বাচিত হন, যে দলটি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকে।”

এর বদলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতেই অভিশংসনের ক্ষমতা রাখার পক্ষে যুক্তি দেন রিজভী।

রায় নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “উনারা যখন ষোড়শ সংশোধনী করেন, তখন সংবিধানের আলোকে ওইটা করেছেন। কারণ পঞ্চম সংশোধনীতে যে জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়েছিল অভিশংসনের জন্য তা কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীতে বহাল ছিল।

“শুধু একটি রাজনৈতিক দল, যারা জোর করে ক্ষমতায় আছে, তাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য তারা ২০১৪ সালের এই ষোড়শ সংশোধনী করেছিলেন। তারা একতরফা নির্বাচন করেছেন, ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছেন। সেজন্য তিনি (আইনমন্ত্রী) এটা বলবেন।”

আওয়ামী লীগ নেতারা রায় নিয়ে ক্ষুব্ধ হলেও দেশের সাধারণ মানুষ হাই কোর্টের সিদ্ধান্তকে ‘সাধুবাদ’ জানাচ্ছে বলে দাবি করেন এই বিএনপি নেতা।

নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে উপস্থিত ছিলেন।