জয়ের চ্যালেঞ্জ নিন: খালেদাকে হাসিনা

ত্রিশ কোটি ডলার পাচারের তোলা অভিযোগ প্রমাণে সজীব ওয়াজেদ জয়ের চ্যালেঞ্জ নিতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2016, 06:52 PM
Updated : 5 May 2016, 06:55 PM

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশের সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “কয়েকদিন আগে বিএনপিনেত্রী জয় সম্পর্কে একটি অসত্য তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চাইলেন। জয় সেটা চ্যালেঞ্জ করেছে।

“আমি আশা করি, সেই চ্যালেঞ্জের জবাব তিনি দেবেন এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন।”

জয়কে প্রাণনাশের চক্রান্তের মামলায় বিএনপি ঘনিষ্ঠ সম্পাদক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে গত ৩০ এপ্রিল এক সভায় খালেদা যুক্তরাষ্ট্রে একটি ব্যাংক একাউন্টে শেখ হাসিনাপুত্রের নামে ৩০ কোটি ডলার রয়েছে বলে দাবি করেন।

জয়ের বিষয়ে তথ্য পেতে এফবিআইয়ের এক এজেন্টকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় প্রবাসী এক বিএনপি নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারের কারাদণ্ডের রায়ে এই অর্থের উল্লেখ রয়েছে বলে তার দাবি।

যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ওই রায়কে কেন্দ্র করেই ঢাকায় পুলিশ গত বছর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জয়কে হত্যাচেষ্টার মামলাটি করে। ওই মামলায় দুই সপ্তাহ আগে গ্রেপ্তার করা হয় শফিক রেহমানকে।

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের একদিন বাদেই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জয় ফেইসবুকে লেখেন, “ম্যাডাম, আপনি যদি জানেন যে ৩০০ মিলিয়ন ডলার কোথায়, অনুগ্রহ করে আমাকে জানান। আমি সেই সমস্ত অর্থ এতিমদের দান করে দিতে চাই।”

নিজের ছেলেকে নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের নেত্রীর অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে সন্তানদের সুশিক্ষিত করতে নিজের প্রয়াস সংসদে তুলে ধরেন।

“এই সংসদের মাধ্যমে জানাতে চাই, আমরা ছেলে-মেয়েদের মানুষ করেছি। জীবনে কোনো কিছু চাইনি। আমরা ছেলে-মেয়েদের একটাই বলেছি, একটা মাত্র জিনিস তোমাদের দিতে পারব সেটা হলো শিক্ষা। আমরা ছেলে-মেয়েকে শিক্ষা দিয়েছি। ”

তিনি জানান, জয় ভারতের ব্যাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস থেকে কম্পিউটার প্রকৌশলে গ্রাজুয়েশন করেন।

“সেখান থেকে কিছু দিন ব্যবসা করেছে নিজে অর্থ সংগ্রহ করেছে। এরপর স্টুডেন্ট লোন নিয়ে হার্ভার্ড থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি করেছে। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছে।”

সজীব ওয়াজেদ জয়

পক্ষান্তরে খালেদা জিয়ার ছেলেদের সঙ্গে তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “তাকে (জয়) সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছি আমরা, চোর-চোট্টা বানাইনি। সে চোর-চোট্টা হতে এখানে আসেনি। ক্ষমতার ব্যবহার করে টাকা বানাতেও আসেনি। তারা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করছে, বিনিময় কিছু নেয়নি। নিজেরটা নিজেই করে খাচ্ছে।”

“আমাকে গ্রেনেড হামলা করে, বোমা পুঁতে নানাভাবে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন আমার ছেলেকে হত্যার চেষ্টা করছে। সেই ষড়যেন্ত্র তারা লিপ্ত। হত্যা খুন করা তাদের পেশা,” বলেন তিনি। 

২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান বিচারের মুখোমুখি। বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকো মুদ্রা পাচারের দায়ে দণ্ডিত ছিলেন। তবে বিএনপির দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “তারা কত টাকা চুরি করেছে? মানি লন্ডারিং করে বিদেশে রেখেছে। এই প্রশ্নটা জাগে যখন আমরা দেখি এফবিআইয়ের অফিসারকে ঘুষ দিয়ে কিনে ফেলেছে। এফবিআই অফিসারদের ঘুষ দিয়ে কিনে ফেলতে পারে এই পরিমাণ অর্থ বিএনপির নেতাদের কাছে রয়েছে। এটা আমেরিকায়ই ধরা পড়েছে।

“সেখানে বেরিয়েছে, জয়কে তারা অপহরণ করবে। জয়কে তারা ’অফ’ করে দেবে। অর্থাৎ তাকে হত্যা করে ফেলবে। তাকে জীবন থেকে সরিয়ে দেবে। এই ধরনের তথ্য কিন্তু বেরিয়ে এসেছে।”

জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর ইউএনওডিসি এবং বিশ্ব ব্যাংকের সমন্বিত উদ্যোগে ‘স্টোলেন ‍অ্যাসেট রিকভারি ইনিসিয়েটিভ’র একটি পুস্তিকায় সিমেন্স কোম্পানির কাছ থেকে খালেদা জিয়ার ছেলের ঘুষ নেওয়ার ঘটনাকে জাতীয় মুদ্রা সরানোর উদাহরণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও সংসদে জানান প্রধানমন্ত্রী।

“এই পুস্তিকাটি ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভিয়েনায় প্রকাশ করা হয়েছে। এই বইয়ের ১৭৯ পৃষ্ঠায় বলা হয় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলেকে ঘুষ হিসেবে বিদেশি একটি কোম্পানির দেওয়া অর্থ ২০০৯ সালে বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বিভাগ।”

“এটা ভিয়েনাতে প্রকাশিত খবর আমার নয়। ২০০৯ সালের ৮ ‍জানুয়ারি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার পুনরুদ্ধারে ডিস্টিক্ট অফ কলাম্বিয়ার একটি আদালত আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হয়। এই অর্থ সিমেন্স থেকে বিএনপি নেত্রী তার ছেলের মাধ্যমে গ্রহণ করে এবং সিঙ্গাপুরে ব্যাংকে জমা রাখে।”

“বিএনপি নেত্রীর ছেলের সেই টাকা আমরা ফিরে আনতে পেরেছি। বাংলাদেশে ইতিহাসে প্রথম এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।”

গত ৩০ এপ্রিল এই সভায়ই জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার ছেলেরা ওয়ারিদসহ অনেক বহুজাতিক কোম্পানি থেকে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলেও শেখ হাসিনা দাবি করেন।

“দুর্নীতি করেছে বলেই ভাঙ্গা সুটকেস, ছেড়া গেঞ্জি থেকে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। তাদের বিলাসবহুল জীবন-যাপন সকলের চোখে পড়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের তথ্যে বিভিন্ন দেশের দুর্নীতিবাজদের তালিকায়ও বিএনপি নেত্রীর ছেলেদের নাম থাকার কথা সংসদে জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

“আর বিশ্বসেরা অর্থ পাচারকারীদের যে নাম প্রকাশিত হয়, সেখানেও তার ছেলেদের নাম উঠে আসে।”

তারেক ও আরাফাত সম্পর্কে শেখ হাসিনা আরও বলেন, “বিএনপি নেত্রীর দুই ছেলে আজকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন।

“মানি লন্ডারিং  তো সিঙ্গাপুরের আদালতে প্রমাণিত। এটা আমাদের করা লাগেনি। বিএনপি নেত্রীর বড় ছেলেকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর ওই তার বার্তা পাঠানো হয়েছিল। ওই তার বার্তায় বিএনপি নেত্রীর বড় ছেলে যে ঘুষ নিয়েছিল সে তথ্য বেরিয়ে এসেছিল। সিমেন্স, হারভিন কোম্পানির কাছ থেকে তারা যে ঘুষ নিয়েছে, সেগুলো তো প্রমাণিত।”

জয়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খালেদা জিয়ার আহ্বানের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা আরও বলেন, “তারা অবৈধভাবে অর্থ বানিয়ে পাচার করেছ। তাদের অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং আমাদের বলতে হবে না, আমেরিকার ফেডারেল কোর্টে প্রমাণিত হয়েছে।

“খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, কালো টাকা সাদা করেছেন। একজন প্রধানমন্ত্রীর কালোটাকা বানাতে বা হবে কেন আর সাদা করতে হবে কেন? সেই কর্মকাণ্ডও সে করেছে।”