হাই কোর্টের রায়ের প্রতিক্রিয়া সংসদে ওয়াকআউটে

বিচারক অপসারণের ক্ষমতা আইনসভার হাতে আনাকে ‘অবৈধ’ বলে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানোর পর বিচারপতিদের বেতন-ভাতা বিল সংসদে উত্থাপনের সময় ওয়াকআউট করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিরোধী দলের সদস্যরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2016, 12:24 PM
Updated : 5 May 2016, 01:02 PM

হাই কোর্টের রায় নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে সংসদে বাদানুবাদের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা বাড়ানোর বিলটি উত্থাপন করতে গেলে প্রথমে হৈ চৈ শুরু করেন জাতীয় পার্টির সদস্যরা।

হাই কোর্টের এই রায় ‘সংবিধান পরিপন্থি’ এবং তা আপিলে টিকবে না বলে আইনমন্ত্রী আশ্বস্ত করার পরও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে বিরোধী দলের সদস্যরা ওয়াকআউট করেন।

বিল উত্থাপনের সময় বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। বিল উত্থাপন শেষ হলে কয়েক মিনিট পর তারা আবার ফিরে আসেন।

উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়।

ওই সংশোধন চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবীর একটি রিট আবেদনের রায়ে বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের তিন বিচারপতির একটি বেঞ্চ সংসদের ওই পদক্ষেপকে অবৈধ বলে রায় দেয়।

সংসদ সদস্যদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা আনার পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ বলার এই রায় নিয়ে বৃহস্পতিবার অধিবেশনের শুরুতেই পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম।

পরে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদলও আলোচনা করেন।

জাতীয় পার্টি এবং জাসদের সংসদ সদস্যদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩০০ বিধিতে বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ষোড়শ সংশোধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া হাই কোর্টের এই রায় আপিলে টিকবে না। রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের উপর ন্যস্ত ছিল। জিয়াউর রহমানের সময় সামরিক ফরমান বলে তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে ন্যস্ত হয়েছিল। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে তাই সংবিধানে ষোড়শ সংশোদন আনা হয়েছে।   

আসরের নামাজের বিরতির পর অনির্ধারিত আলোচনায় দাঁড়িয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম নীতি-নির্ধারক শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু রায়ের সমালোচনা করেন।

ফাইল ছবি

এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা বাড়ানোর বিলটি আইনমন্ত্রীকে উত্থাপনের আহ্বান জানালে সংসদে উপস্থিত সব দলের সদস্যরাই সমস্বরে প্রতিবাদ জানান।

সংসদ সদস্যদের উচ্চস্বরে আপত্তির মধ্যেই বিলটি উত্থাপনের জন্য দাঁড়ান আনিসুল হক।

প্রবল বিরোধিতার মুখে আনিসুল হক বলেন, “বিচারপতিরা অবিবেচক হতে পারেন। সংসদ অবিবেচক না। যে রায় লিখুক না কেন, যে রায় দিক না কেন ... আমরা হীনমন্যতার শিকার হব না। আমরা উদারতা দেখাব।”

এরপরও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা হৈ চৈ করতে থাকেন।

তখন জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুর উদ্দেশে স্পিকার বলেন, “আপনারা বিল উত্থাপনের বিরোধিতা করতে পারেন।”

বাবলু তখন বলেন, “তারা যদি জাতীয় সংসদের আইন বাতিল করতে পারে, তাহলে তো তারা (বিচারপতি) নিজেরাই নিজেদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে নিতে পারেন।

“আজকে যে রায় দিয়েছে, তা অপমানজনক। যে রায় দিয়ে তা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত বিলটা স্থগিত করে সংসদের প্রতি সম্মান দেখানো হোক।”

এরপরও আইনমন্ত্রী বিল উত্থাপনের উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের আরেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের গড়া দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।    

বিলটি উত্থাপন করতে গিয়ে আনিসুল হক বলেন, “আমরা হীনমন্যতার শিকার হব না। আমরা আমাদের উদারতা .. এটা ব্যক্তির জন্য নয়, প্রতিষ্ঠানের জন্য। প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য যা করার তা করব। যারা ষড়যন্ত্রের শিকার হয় .. তাদের সাথে আমরা নাই।”