খালেদাকে নিয়ে জয়ের বক্তব্য অশোভন: বিএনপি

খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেইসবুক পোস্টকে ‘অশোভন ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত’ আখ্যা দিয়ে তার নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 May 2016, 08:37 AM
Updated : 4 May 2016, 11:46 AM

দেশের একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের ছেলে হিসেবে বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রধানকে নিয়ে কথা বলতে যে ‘ভদ্রতা’ দেখাতে হয় তার লেশমাত্র জয়ের পোস্টে নেই বলে দাবি করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বুধবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “একজন প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের তিমিরাচ্ছন্ন চেতনা জমিদারের বেপরোয়া তনয়ের মতো। ঔদ্ধত্য, অসহিষ্ণুতা আর মানুষকে অবজ্ঞা করাই হচ্ছে তার স্বভাব। এই ছেলে যদি কখনো রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পায়, তাহলে সজ্জন ভদ্রলোকদের দেশে বাস করাই কঠিন হয়ে পড়বে।”

যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কিত তথ্য পেতে এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দেওয়ায় এক প্রবাসী বিএনপি নেতার ছেলের কারাদণ্ডের মামলার নথিতে জয়ের অ্যাকাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার থাকার তথ্য রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা। জয়কে আটক করে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানান তিনি।

এর প্রতিক্রিয়ায় গত রোববার এক ফেইসবুক পোস্টে খালেদা জিয়ার কাছে ‘ওই অর্থ’ কোথায় তা জানতে চান সজীব ওয়াজেদ জয়।

বিএনপি নেত্রীর সমালোচনা করে তিনি লেখেন, “একজন মহিলা, যিনি এতিমের টাকা চুরি করেছেন, যার ছেলে দুর্নীতির কারণে এফবিআই কর্তৃক পলাতক আসামি, তার মতো লোকের অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর নাতির দিকে কাদা ছোড়া উচিত নয়।”

জয়ের এই পোস্ট নিয়ে রিজভী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে অশোভন ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করেছেন। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সম্বোধন করাও তিনি শেখেননি, দেশের একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের পুত্র হিসেবে বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রধানের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে যতটুকু ভদ্রতা প্রদর্শন করা দরকার, সেটির লেশমাত্রও তার মধ্যে নেই।”

“অবৈধ সরকার প্রধানের পুত্র দেশের জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের বিরুদ্ধে অশোভন কথা বলেন, তখন দেশের মানুষ হতবাক হয়, তার পারিবারিক সংস্কৃতি নিয়েও বড় ধরনের প্রশ্ন চলে আসে। আমরা সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্ট্যাটাসের তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি।”

মে দিবসের সমাবেশে এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য নিয়ে কুমিল্লার আদালতে মানহানির মামলা দায়েরেরও প্রতিবাদ জানান রিজভী।

তিনি বলেন, “দেশনেত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি অ্যাকাউন্টেই তিনশ মিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়েছে। এটি সন্দেহজনক লেনদেন। এই টাকার উৎস কী তা দেশনেত্রী জানতে চেয়েছেন। এই ঘটনা শুধু দেশনেত্রীই নয়, বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের মানুষের মনে প্রশ্ন- জয়ের এই টাকার উৎস কী? এখন এই ঘটনার ব্যাখ্যা ও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার দায়িত্ব সজীব ওয়াজেদ জয়ের, বেগম খালেদা জিয়ার নয়।”

রিজভী বলেন, “ তার (জয়) অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ যদি বৈধ হয়, তাহলে তা জনসমক্ষে উপস্থাপন করতে সমস্যা না থাকারই কথা। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা তনয় যে বক্তব্য পেশ করেছেন, তা এতটাই দুর্বিনীত, রুচি ও শিষ্টাচার বহির্ভূত যে তাতে রহস্য আরও বেশি ঘনীভূত হয়। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, চুরির মালের কথা প্রকাশ হয়ে যাওয়াতে জয় সাহেব অস্থির হয়ে পড়েছেন কি না।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “শেখ হাসিনার শিরঃপীড়া এখন জয়কে নিয়ে। জয়ের অপকীর্তি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। আর তিনি যখন কোনো কিছু সামাল দিতে পারছেন না, তখন অত্যাচার হুমকি উৎপীড়নের পথ ধরে বিরোধী পক্ষের উপর ক্রমাগত বিষাক্ত আক্রমণ চালাতে থাকেন।

“প্রধানমন্ত্রীর গুণধর পুত্রের গুণকীর্তন দেশে-বিদেশে যেভাবে প্রচার হচ্ছে তাতে মনে হয়, আওয়ামী তরী আর বেশি দিন পানিতে ভাসিয়ে রাখা যাবে না।”

তবে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রয়াত বাবা অধ্যাপক ওয়াজেদ মিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেন রুহুল কবির রিজভী।

সজীব ওয়াজেদ জয়

“জয় সাহেবের বাবা ড. ওয়াজেদ সাহেব উনি যে কলেজে লেখাপড়া করেছে, সে কলেজে আমিও পড়েছি। উনার যারা সতীর্থ ছিলেন তারা অনেকে আমার শিক্ষক ছিলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে। সবাই তার মেধা, তার সৃজনশীলতা এবং সৌজন্যেবোধ নিয়ে গল্প করতেন। আমরা মনে হয়, তার পিতার যে গুণাবলী সেটা তিনি পাননি, অন্য কারও গুণাবলী তার মধ্যে থাকতে পারে।”

ইউনিয়ন পরিষদের চতুর্থ দফায় ৭ মের ভোট সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিএনপি প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর হামলা করছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, “আগের মতোই আগামী ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনরা সহিংসতা ও সন্ত্রাস চালাচ্ছে। বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দিচ্ছে না, ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।

“নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার নেই।”

মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার কিছু চিত্র সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।

কারাবন্দি সাবেক সাংসদ শহীদ উদ্দিন চৌধুরীকে আরেকটি নতুন মামলায় গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, হারুনুর রশীদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবদুল লতিফ খান, আসাদুল করীম শাহিন, তাইফুল ইসলাম টিপু, সাইফুল ইসলাম পটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।