১/১১ এর মাধ্যমে লুটেরাদের পথ প্রশস্ত হয়েছে: গয়েশ্বর

১/১১ এর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হয়নি, একশ্রেণির ‘লুটেরা-সুবিধাবাদী’ গোষ্ঠীর পথ প্রশস্ত হয়েছে বলে মনে করেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2016, 02:32 PM
Updated : 2 May 2016, 02:32 PM

সোমবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এক-এগারোর পরিবর্তনে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হয়নি। বরং একশ্রেণির লুটেরা ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর জন্য একটি পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে। যে পথে আজকে এতো হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাটের গল্প আসছে।”

২০০৭ সালের জানুয়ারির ১১ তারিখ ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা গ্রহণ করে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ফখরুদ্দীন আহমেদের সরকার। জরুরি অবস্থা জারি করে দুর্নীতি দমন অভিযানের কথা বলে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল শীর্ষ রাজনীতিকদের। সংকুচিত করা হয়েছিল বাক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে পরের বছর জানুয়ারিতে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে নবম সংসদের বিরোধী দল বিএনপি।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘অল কমিউনিটি ফোরামের’ উদ্যোগে ‘নির্দয় একক কর্তৃত্ব, ফ্যাসিবাদের হিংস্র আক্রমণে বধ্যভূমিতে বাংলাদেশ’ শীর্ষক সভায় দুর্নীতি সংক্রামক রূপ নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর।

“সবচেয়ে সংক্রামক ব্যধি এইডসকেও আজ হার মানিয়েছে দুর্নীতি। তবে আমি মনে করি, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না।”

‘সরকারের দুর্নীতির চিত্র আকাশে-বাতাসে ভাসছে’ মন্তব্য করে গয়েশ্বর প্রশ্ন রেখে বলেন, “বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় পত্র-পত্রিকা ও যেসব মিডিয়া ছিল, তাদের দরাজ কণ্ঠের প্রচার আজকে হচ্ছে না কেন?”

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের একাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার থাকার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) পুত্র জয়ের কথা আমরা না বললেও বোধহয় খুববেশি সময় নেই, অল্প সময়ের মধ্যেই যাদের এখানে থাকে, যাদের এখানে খায়, যাদের এখানে রাখারাখি আছে, ওইগুলো বোধ হয় তারাই প্রকাশ করবে, বেশি সময় বাকি নাই।”

সংগঠনের সভাপতি প্রকৌশলী মো. আশরাফউদ্দিন বকুলের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও ফোরামের সাধারণ সম্পাদক কাবিরুল ইসলাম চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

‘টার্গেট করে নির্মূলের ষড়যন্ত্রে সরকার’

জাতীয় প্রেস ক্লাবেই পৃথক এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, আগামী দিনে দলটির নেতৃত্ব যারা দেবেন, তাদেরকে সরকার ‘টার্গেট করে নির্মূলের ষড়যন্ত্র’ করছে।

“আগামী দিনে যারা বিএনপির নেতৃত্ব দিতে পারেন- এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে। নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। এমনিভাবে আমাদের কত নেতা-কর্মীকে গুম করে ফেলা হয়েছে। অনেকে আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়ে গেছে।”

প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভা হয়।

গত বছরের ৩ জানুয়ারি রাজশাহী কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান তিনি। পরিবারের অভিযোগ, বিনা চিকিৎসায় তাকে মেরে ফেলা হয়।

বর্তমানে দেশে কেউ নিরাপদ নয়- মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিরাপদ না; ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী নিরাপদ না; মসজিদের ইমাম সাহেব, মন্দিরের পুরোহিত নিরাপদ না; গীর্জার পাদ্রি নিরাপদ না- এমনকি মায়ের পেটের শিশুও নিরাপদ না।

“এই যে বাস্তব অবস্থা; এর পরিবর্তন আনতেই হবে।”

মহানগর ছাত্র দল দক্ষিণের সভাপতি এ এ জহিরউদ্দিন তুহিনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মাহবুবুল হক নান্নু, কাজী আবুল বাশার, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, ছাত্র দল সভাপতি রাজীব আহসান ও প্রয়াত পিন্টুর স্ত্রী নাছিমা আখতার কল্পনা বক্তব্য রাখেন।