নিরাপত্তা দিতে না পারলে ট্যাক্সও দেব না: সেলিম

জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনীর প্রধানের নাগরিকদের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানানোর সমালোচনা করেছেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2016, 03:52 PM
Updated : 27 April 2016, 03:55 PM

“যদি আমাদের নিরাপত্তা আমাদেরকেই দিতে হয় তাহলে সরকারের কাজ কী?” বুধবার এক সমাবেশে বক্তব্যে এই প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেছেন, “ট্যাক্স নেওয়ার সময় তো উল্লেখ থাকে যে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। আমি বাংলাদেশের সকল মানুষের পক্ষে বলতে চাই, নিরাপত্তা না দিতে পারলে ট্যাক্স দেব না।”

গত এক বছর ধরে একের পর এক লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হত্যাকাণ্ডের পর খুনি গ্রেপ্তারে পুলিশের ব্যর্থতার সমালোচনার মধ্যে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক নাগরিকদের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।  

সোমবার রাজধানীর কলাবাগানে ঘরে ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয়কে কুপিয়ে হত্যার পর তিনি বলেছিলেন, ঘরে ঘরে নিরাপত্তা দেওয়ার পুলিশের পক্ষে সম্ভবপর নয়। এক্ষেত্রে সবাইকে নিজ নিজ আবাসে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে হবে।  

সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ ও নাট্যকর্মী তনয় খুন হওয়ার দুদিন আগে রাজশাহীতে একই কায়দায় হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে।

আবেদন না করায় অধ্যাপক সিদ্দিকীকে ‘নিরাপত্তা দেওয়া যায়নি’ বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বক্তব্যের সমালোচনাও করেন সিপিবি সভাপতি সেলিম।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ওই সমাবেশে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা চেয়ে ১৬ কোটি দরখাস্ত দেওয়া উচিৎ। তারপর প্রতি জনের জন্য দুটি করে পুলিশ দেবে সরকার।”

সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হাতে একের পর এক হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ফারাক তুলে ধরেন বাম নেতা সেলিম।

“প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এ ধরনের ঘটনা পরিকল্পিত। আর সে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন আরেক কথা (বিচ্ছিন্ন ঘটনা)। আমরা জানতে চাই কে মিথ্যা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?”

এই ধরনের প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর আইএস ও আল কায়দার নামে আসা বার্তায় ‘ইসলাম অবমাননা’কে কারণ দেখানোর প্রতিক্রিয়ায় সেলিম বলেন, “ইসলাম ধর্ম কাচের মতো ঠুনকো না যে ২/১ জন কিছু লিখলে ধর্ম নষ্ট হয়ে যাবে। এ সকল হত্যাকাণ্ড ধর্ম নিয়ে লেখার কারণে নয়, এটা রাজনৈতিক।”

শেখ হাসিনার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এক সময়ের জোটসঙ্গী সিপিবির সভাপতি বলেন, ‍“আপনি বলেছেন উন্নয়ন আগে, গণতন্ত্র পরে। তাহলে রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে গণতন্ত্র কথাটি বাদ দিয়ে দিন।”

চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাস করেছে- এ কথা কোনোদিন কেউ শুনেছেন? সরকার এমন অদ্ভুত গণতন্ত্র কায়েম করেছে যে জনগণের হাতে আর কোনো ক্ষমতা নেই।

“ক্ষমতা পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই, যে কোনো সময় এরা আপনাকেও সরিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করবে না।”

‘গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি বন্ধে কর, অব্যাহত খুন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি রুখো’ স্লোগানে বুধবারের এই সমাবেশে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাই পাগলের প্রলাপ বকছে মন্ত্রীরা। পুলিশ, আমলা, আর দুর্নীতিবাজ- সব মিলিয়ে সরকারই বুঝছে না, কী করা উচিৎ।”

সমাবেশে সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, আহসান হাবিব লাবলু, সাজেদুল হক রুবেল, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজও বক্তব্য রাখেন।