সুপ্রিম কোর্টেও ‘থাবা’ পড়েছে সরকারের: হান্নান শাহ

অসদাচরণের জন্য উচ্চ আদালতের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে তৈরি আইনের খসড়ায় মন্ত্রিসভার দেওয়া সম্মতিকে সুপ্রিম কোর্টের উপর সরকারের ‘থাবা’ হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতা আ স ম হান্নান শাহ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2016, 04:37 PM
Updated : 25 April 2016, 04:37 PM

সোমবার মন্ত্রিসভায় ওই আইনের খসড়া অনুমোদনের পর বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এই সরকার কাউকে বাদ রাখছে না। আমরা যারা কোর্টে গিয়ে হাজিরা দেই, ম্যাজিস্ট্রেসিতে কী হয়- সেটা আপনারা জানেন। দুয়েক জায়গায় আশার আলো থাকে- হাই কোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে। মাশাল্লাহ, তার উপরও তাদের (সরকার) থাবা পড়ে গেছে।

“আজকেই মন্ত্রিসভায় পাস করেছেন, বিচারপতিদের অভিশংসন তারা সংসদে বসে করতে পারবেন। ভালো কথা ভাই- আপনারা তো সবই করতেছেন; দেশটাকে তো পৈত্রিক সম্পত্তি বানাই ফেলছেন।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ‍সুপ্রিম কোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন পায়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “সংবিধানের দায়বদ্ধতা থেকে এ আইন করা হচ্ছে। মূলত বিচারপতিদের অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের বিষয়টি আইনে রাখা হয়েছে।”

ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত ‘সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র’ শীর্ষক সভায় কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার রহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হান্নান শাহ।

“অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আমি লজ্জিত, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে একটা ঘটনা ঘটল- তনু হত্যাকাণ্ড। সেনানিবাসে কী করে এরকম ঘটনা ঘটে? যদি ঘটেও তারপর তার ফলোআপ কোথায়, লোকজন অ্যারেস্ট কোথায়? কী করণে এটাকে ধাপাচাপা দেওয়া হচ্ছে?

“আমি কামান্ডার ছিলাম। স্টেশন কমান্ডারের চাকরি যেত … যিনি সেখানে মিলিটারি পুলিশের (এমপি) দায়িত্বে ছিলেন, তারসহ কয়েকজনের তো চাকুরি যেতোই। কিছুই না। আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকেন, সাত খুন মাফ।”

গাজীপুরের কাশিপুরের কেন্দ্রীয় কারাগারের কাছে অবসরপ্রাপ্ত একজন কারারক্ষীর সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “একজন কারারক্ষীকে জেল গেইটের সামনে গুলি করে মেরে চলে গেছে। এই পুলিশ শুধু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে ব্যস্ত, তারা ক্রিমিনালকে ধরতে ব্যস্ত না।”

গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে হান্নান শাহ বলেন, “গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে শুধু ভাষণ দিলে হবে না। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যারা রাজপথ থেকে রাজপ্রসাদে ঢুকে গেছি, তারা যখন রাজপথে নেমে আসব, তখনই এই সরকারের পতন ঘটবে, গণতন্ত্র অবশ্যই ফিরে আসবে।

“স্বৈরাচারের পতনের পর আমাদের নেত্রী টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে নেতাকর্মীদের শান্ত রেখেছিলেন। এবার যে অবস্থা- গণেশ যদি উল্টায়, ওই গণেশের পূজা কেউ করবে না।”

ইউনিয়ন পরিষদের তিন ধাপের নির্বাচনেই ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ তুলে হান্নান শাহ বলেন, “কেন্দ্রের বাইরে কত সুন্দর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। ভেতরে যে-ই যায়, আঙ্গুলের কালি দিয়ে তার কাছ থেকে ব্যালট পেপারটা নিয়ে নেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের লোকেরা। আর ভোটের সিলটা কিন্তু ওদের হাতেই থাকে। এটাই হচ্ছে অবস্থা।”

আওয়ামী লীগকে একটা ‘হুক্কা হুয়ার’ দল আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, ভোটে বিশ্বাস করে না। এরা বাকশালের বংশধর। সেজন্য বিনা ভোটের অনৈতিক সরকার প্রত্যেকটা নির্বাচনকে এমনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে যাতে কেউ আর ভোট কেন্দ্রে যেতে না চায়। সেই পরিস্থিত তারা করেছে।”

বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন বাবুলের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক খলিলুর রহমান ও সাবেক এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাঁপিয়া উপস্থিত ছিলেন।