লড়াইয়ে থাকছে নৌকা-ধানের শীষ, গুরুত্ব তৃণমূলের মতে

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজধানী ঢাকায়ও।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2016, 07:22 PM
Updated : 12 Feb 2016, 07:39 PM

তফসিলের পর দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, যাতে তৃণমূলের মতের সঠিক চিত্র পাঠাতে বলেছে দুই দলই।

স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিটি দল একজন করে প্রার্থী দিতে পারবে।

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত পৌরসভার ভোটে অংশ নেওয়ায় তা জমে উঠেছিল।

ডিসেম্বর-জানুয়ারির ওই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের পরও দলটি আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভোটে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যাতে স্থানীয় সরকারের ‘সবচেয়ে জমজমাট’ এই ভোটে নৌকা-ধানের শীষের লড়াইয়ের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে জমজমাট ভোট হয় ইউনিয়ন পরিষদে। স্বল্প ভোটে সদস্য পদের লড়াইয়ে প্রতিটি বাড়িতে চলে হিসাব-নিকাশ, যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হয় হাড্ডাহাড্ডি। এবার দলীয় প্রার্থী থাকায় জাতীয় নির্বাচনের হাওয়া থাকবে বাড়ি বাড়ি।

দলভিত্তিক প্রথম পৌর ভোটে নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে ২০টি অংশ নিলেও ইউনিয়ন পরিষদে এ সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করছেন তারা।

ইসির সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার পর রাতেই দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম-স্বাক্ষর ও পদবী ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিটার্নিং অফিসারকে ও ইসিতে দিতে নিবন্ধিত ৪০টি দলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

তৃণমূলের মতামতে প্রার্থী

নির্বাচনী বোর্ড গঠন করে চেয়ারম্যান পদে দলের একক প্রার্থী ঠিক করতে জেলা নেতাদের চিঠি পাঠিয়েছে আওয়ামী লীগ।

শুক্রবার দলটির দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন (যে ইউনিয়নে নির্বাচন হবে) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে ছয় সদস্যের নির্বাচনী বোর্ডকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মনোনীত প্রার্থীর নাম ধানমন্ডি কার্যালয়ে পাঠাতে হবে।

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত ১৯ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যয়নের সিদ্ধান্ত হয়।

নির্বাচনে থাকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক- এই পাঁচজন মিলে চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম অনুমোদন করার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করবে।

দলের পক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন কে দেবেন সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানান তিনি।

প্রচার সামগ্রী সরানোর নির্দেশ

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব সামসুল আলম শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের আগাম প্রচার সামগ্রী সম্ভাব্য প্রার্থীদের উদ্যোগে সরিয়ে বা মুছে ফেলতে হবে। না হলে মনোনয়নপত্র দাখিল করলে বা প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বৃহস্পতিবার বিকালে ঘোষিত তফসিল অনুসারে ৭৫২ ইউপির ভোট হবে ২২ মার্চ। ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমার সুযোগ পাবেন চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের সদস্য প্রার্থীরা। ২ মার্চ পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন বৈধ প্রার্থীরা। ৩ মার্চ প্রতীক পেয়ে প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা।

এ সংক্রান্ত নির্দেশনা রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে জেলা প্রশাসক পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে বলে জানান উপ-সচিব সামসুল আলম।

জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ইসির হাতে থাকলেও নেই ইউনিয়ন পরিষদে। এক্ষেত্রে বিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং দলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

সহজে প্রার্থিতা ইউপিতে

উপ-সচিব সামসুল আলম জানান, অন্য নির্বাচনের মতো ইউনিয়ন পরিষদে হলফনামা ও টিআইএন নম্বর দেওয়ার বিষয়ে প্রার্থীদের বাধ্যবাধকতা নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নেই কোনো শর্ত। তবে দলীয় মনোনয়ন পেতে দলীয় প্রত্যয়ন লাগবে।

তিনি জানান, ঋণ খেলাপি, সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ৫ বছর পার না হলে এবং ইউনিয়ন পরিষদের ঠিকাদার হলে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হবে। এতে প্রস্তাবক-সমর্থকের স্বাক্ষর লাগবে। তারা একই পদের অন্য মনোনয়নপত্রে সই দিতে পারবেন না; এক ব্যক্তি একাধিক এলাকায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন না।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচ লাখ টাকা ও সদস্য পদে এক লাখ টাকা ব্যয়ের সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যক্তিগতভাবে ৫০ হাজার টাকা ও সদস্য ১০ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।

‘লবিং-গ্রুপিং চলছে’

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কয়েকজন জেলা প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনই এখন পাড়া-মহল্লা ও হাট-বাজারের অন্যতম আলোচনার বিষয়।

কক্সবাজার প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া জানান, প্রথম ধাপে চার উপজেলার ১৯টি ইউপিতে ভোট হবে। চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আর চায়ের দোকান থেকে হাট-বাজারে সবখানে চলছে তাদের আলোচনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, “দলবদল করে অনেকে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে আগাম কথা বলতে চান না তারা। ভেতরে-ভেতরে লবিং-গ্রুপিং চলছে। কে মনোনয়ন পায়, কে কোন দলে যাচ্ছে- তাই দেখছে ভোটারা।”

বগুড়া প্রতিনিধি জিয়া শাহীন জানান, দুই উপজেলার ১৩টি ইউপিতে ২২ মার্চ ভোট হবে। এ নিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা, এমনকি এমপিদের বাড়িতে চলছে তদ্বির।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো কোনো দল ভেতরে-ভেতরে মনোনয়ন বঞ্চিতদের দলে টানার চেষ্টায় আছে। দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থি হওয়ার চিন্তাও আছে অনেকের।