ইউপি ভোট কেমন হবে, সংশয়ে বিএনপি

গত কয়েকটি নির্বাচনে অনিয়মের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট কেমন হবে তা নিয়ে তাদের সংশয় রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2016, 09:39 AM
Updated : 12 Feb 2016, 10:34 AM

অবশ্য তারা দুজনেই বলেছেন, বিএনপি স্থানীয় সরকার পর্যায়ের এই নির্বাচনে যেতে চায়।

শুক্রবার সকালে রাজধানীতে সাংস্কৃতিক একাডেমি আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান এবং জাতীয়তাবাদী নাগরিক দলের আরেক সভায় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এসব কথা বলেন।

মাহবুবুর রহমান বলেন, “বিএনপি নির্বাচন বিমুখ দল নয়। আমরা নির্বাচন করব, করতে চাই। তবে সেই নির্বাচনটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা-তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। কারণ অতীতের নির্বাচনে জনগণের ভোটকে কী করা হয়েছে, জনগণ জানে।”

অন্যদিকে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “আমরা ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচনেও অংশ নিতে চাই। এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা আমাদের আছে। কিন্তু অতীতের যে অভিজ্ঞতা, নির্বাচন কমিশনের এক চোখা যে নীতি- এই নীতিতে সবাই আজকে ইউপি নির্বাচন সম্পর্কে সন্দিহান।

“এটা যদি আগের পৌর নির্বাচনের মতো হয়, উপজেলার নির্বাচন মতো হয়- তাহলে এই নির্বাচন আমাদের কাছে, জনগণের কাছে অর্থহীন হয়ে যাবে।”

স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে অংশ নেওয়ায় আইন সংশোধিত হলে গত ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচনের পর বৃহস্পতিবার সারাদেশে ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের তফসিল ঘোষণা নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আগামী ২২ মার্চ থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে মোট ছয়টি ধাপে সারাদেশের চার হাজার ২৭৯ ইউনিয়নে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন ৪ জুন পর্যন্ত চলবে।

প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হবে ২২ মার্চ; এরপর ৩১ মার্চ ৭১০টি ইউপি; ২৩ এপ্রিল ৭১১টি ইউপি, ৭ মে ৭২৮টি ইউপি, ২৮মে ৭১৪টি ইউপি এবং ৪ জুন ৬৬০টি ইউপিতে ভোট হবে।

পৌরভোটের মেয়রপ্রার্থীদের মতো ইউপির ভোটেও শুধু চেয়ারম্যান প্রার্থীরা প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন। সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা আগের মতোই ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন।

বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় সাত বছর পর গত ডিসেম্বরের ২৩৪ পৌরসভায় ভোটের মাঠে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের লড়াই হয়। বাংলাদেশের মোট ভোটারের মাত্র ৭ শতাংশের অংশগ্রহণে ওই নির্বাচন হলেও সবগুলো জেলায় ভোট হওয়ায় তা মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছিল প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কাছে।

তবে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই অধিকাংশ স্থানে জয় পায়। আর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির প্রার্থীদের ভরাডুবির পর দলটি ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন ‘বিচ্ছিন্ন’ কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাতীয়তাবাদী নাগরিক দলের আলোচনা সভায় সাংবিধানিক সংস্থাটির সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান।

ইসির উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা প্লেইন লেভেল ফিল্ড তৈরি করুন। আপনারা ভোটারদের বিশ্বাস অর্জন করুন। আপনারা এমন কিছু কার্য্ক্রম চালান, যেখানে আপনাদের নিরপেক্ষতা জনগণ দেখতে পায়।

“কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, ইসির তরফ থেকে সেরকম কোনো কিছু দেখতে পারছি না। তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করছে। সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, ঘোষণা দেবে- সেটা সরকারের মুখে প্রত্যক্ষভাবে না এসে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে প্রচারিত হয়। এরকম ইসি দিয়ে দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।”

বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায় না মন্তব্য করে নোমান বলেন, “পৌর নির্বাচন সম্পর্কে আমরা বলতে চাই, বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায় না। নির্বাচন তো নির্বাচকমণ্ডলীর; আর জনগণই হচ্ছে নির্বাচকমণ্ডলী। কাজেই সেই জনগণকে নিয়ে বিএনপির ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।”

“কিন্তু আজকে নির্বাচনের নামে যে প্রহসন একের পর এক হচ্ছে, সে সম্পর্কে জাতিকে সজাগ থাকতে হবে।”

এদিকে সাংস্কৃতিক একাডেমির আলোচনায় ভারতের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার প্রসঙ্গ টেনে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‍“ভারতে নির্বাচনের সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বেশি শক্তিশালী থাকেন। কিন্তু আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশন নতজানু আজ্ঞাবহ।”

সাংস্কৃতিক একাডেমির চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ব্যাপারির সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় বিএনপির রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী ও  ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফাসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।

জাতীয়তাবাদী নাগরিক দলের সভাপতি শাহজাদা সৈয়দ মো. ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে আলোচনায় যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।