গণতন্ত্র না থাকলে উন্নয়ন টিকবে না: ইপিকে বিএনপি

বাংলাদেশ বর্তমানে ‘গণতন্ত্রহীন’ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দাবি করে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলকে বিএনপি বলেছে, গণতন্ত্র না থাকলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2016, 03:01 PM
Updated : 11 Feb 2016, 05:06 PM

বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার ইউরোপের দেশগুলোর যৌথ পার্লামেন্টের (ইপি) প্রতিনিধি দলটি বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের কাছে এই বক্তব্য তুলে ধরা হয়।

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি বাংলাদেশে এখন ‘গণতন্ত্র নেই’ বলে দাবি করছে।

তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এলেও তাতে কোনো সাড়া না দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার কথা বলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

গুলশানে খালেদার কার্যালয়ে ইউরোপের আইন প্রণেতাদের সঙ্গে বৈঠকে উন্নয়নের বিষয়গুলো উঠে আসে বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এটা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, দেশে কোনো টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না, যদি গণতন্ত্র না থাকে।”

ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য শক্তিশালী করতে সরকারের ভূমিকার বিষয়টি তুলে ধরে মঈন খান বলেন, “তা (বাণিজ্য সম্পর্ক) তখনই জোরদার হতে পারে, যদি এখানে একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার থাকে।

“যদি এদেশের সরকার জনগণকে প্রতিনিধিত্ব না করে, এদেশের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব না করে, তাহলে সেই সরকার কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কখনও ব্যবসা বাণিজ্য জোরদার করতে পারবে না- এটা আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি।”

বাংলাদেশে মানবাধিকার ও সুশাসনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে বিএনপি নেতা জানান,যে দুটি বিষয় নিয়ে বরাবরই অসন্তোষ জানিয়ে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

“দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, তাহলে সুশাসন থাকতে পারে না। দেশের আজকের যে সরকার, তাতে যদি জনগণের প্রতিনিধিত্ব না থাকে, তাহলে সেই সরকার কখনও জনগণের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না,” বলেন মঈন খান।

বিকালে খালেদার কার্যালয়ে যায় সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলটি। তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন।

ইপির সদস্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ডেলিগেশনের চেয়ারপারসন জ্যঁ ল্যাম্বার্ট এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ডেলিগেশনের ভাইস চেয়ার রিচার্ড হাওইট, ইন্টারনাল মার্কেট অ্যান্ড কনজ্যুমার প্রটেকশন কমিটির সদস্য ইভান স্টিফেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিটির সদস্য সাজ্জাদ করিমের সঙ্গে ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত পিয়ের মায়াদনও ছিলেন।

খালেদার সঙ্গে মঈন খান ছাড়াও ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী,  পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, পোশাক শিল্প মালিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ইপি প্রতিনিধি দলটি বিএনপির কাছে গেল।

বৈঠকের পর প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কিছু বলা হয়নি।

আবদুল মঈন খান

আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে বিএনপি নেতা মঈন খান বলেন, “প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপরে সরকার রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে-এসব তো স্বাভাবিকভাবে আলোচনার বিষয়।।”

গুম-খুনের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, “বিগত কয়েক বছরে এদেশে কত মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেছে, কত মানুষ পুলিশের গুলিতে নিহত-আহত হয়েছে। কত হাজার হাজার লোক কারারুদ্ধ হয়েছে। তাদের একটি অপরাধ, তারা বিরোধী দল করে। এগুলো আলোচনায় এসেছে।”

“ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ নিয়ে যে উদ্বেগ, তার উপর আলোচনা হয়েছে। এদেশের বর্তমান রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক-আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে চিত্র রয়েছে, সেই চিত্রগুলো তারা উপলব্ধি করার জন্য আমাদের প্রশ্ন করেছেন, আমরাও তাদের প্রশ্ন করেছি এবং পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে মোটামুটি দেশের আজকের এই ক্রান্তি লগ্নে যে গণতন্ত্র নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, সেই বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে।”

বিএনপি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাসী বলে প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে।

“সেই শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গেলে যেটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটি সুষ্ঠু, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান। এই নির্বাচন যদি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে কিন্তু সঠিক ক্ষমতা হস্তান্তর হতে পারে না, যার প্রমাণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট বিহীন নির্বাচন।”