বিএনপির কাউন্সিলে তারেকের পদেও নির্বাচন হবে

বিএনপির আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে চেয়ারপারসনের মতো সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচন করতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছে দলটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2016, 06:56 AM
Updated : 29 Feb 2016, 06:25 AM

ছয় বছর আগে সর্বশেষ কাউন্সিলে খালেদা জিয়াকে চেয়ারপারসন পদে রেখে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদ তৈরি করে সেখানে তার বড় ছেলে তারেক রহমানকে বসানো হয়। তবে ওই পদে নির্বাচনের কোনো নিয়ম এতোদিন গঠনতন্ত্রে ছিল না।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির ব্যর্থতার মধ্যে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যেই বুধবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলটি গঠনতন্ত্র সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে চেয়ারপারসন নির্বাচনের সাথে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের লক্ষ্যে দলীয় গঠনতন্ত্রের প্রয়োজনীয় সংশোধনী করার জন্য দলের চেয়ারপারসনকে অনুরোধ করা হয়। আমাদের গঠনতন্ত্রে তাকে সেই অধিকার দেওয়া হয়েছে।

“স্থায়ী কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে চেয়ারপারসন দলের গঠনতন্ত্রের ১৯ ক ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী অনুমোদন করেছেন।”

আসন্ন কাউন্সিলের প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক কয়েক ডজন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে গত আট বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০০৯ সালে ৮ ডিসেম্বের কাউন্সিলে বক্তৃতা করেছিলেন তিনি।  

আগামী ১৯ মার্চ দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপির আবেদনে গণপূর্ত অধিদপ্তর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের অনুমতি দিলেও পুলিশের সায় এখনও মেলেনি।

নয়া পল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল জানান, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার চেয়ারম্যান করা হয়েছে প্রবীণ নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে।

কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন-আল রশিদ ও সদস্য সচিব করা হয়েছে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আমীনুল হককে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কাউন্সিল সফল করতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি এবং ১১টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর মধ্যে অভ্যর্থনা উপকমিটির আহবায়ক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধন উপকমিটির আহবায়ক তরিকুল ইসলাম, শৃঙ্খলা ও সেবা উপকমিটির আহবায়ক আসম হান্নান শাহ, ব্যবস্থাপনা ও প্রচার উপকমিটির আহ্বায়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড্রাফটিং উপকমিটির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উপকমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিক শফিক রেহমান, প্রকাশনা উপকমিটির আহ্বায়ক ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চিকিৎসা সেবা উপকমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, দপ্তর ও যোগাযোগ উপকমিটির আহ্বায়ক যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সাংস্কৃতিক উপকমিটির আহ্বায়ক গাজী মাজহারুল আনোয়ার।

এছাড়া অর্থ উপকমিটিও থাকবে। তবে এর আহ্বায়কের নাম এখনও নির্ধারণ হয়নি বলে জানান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।

কাউন্সিলের স্থান চূড়ান্ত না হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, “১৯ মার্চ আমাদের জাতীয় কাউন্সিল হবে। আমরা তারিখ ঘোষণা করেছি। ভেন্যু আমরা তিন জায়গাতে চেয়েছি। এখনো আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি। আশা করছি দুই-একদিনের মধ্যে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারব।”

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

“সভা মনে করে দেশকে রাজনীতিক শূন্য করার অংশ হিসেবে এটি একটি গভীর চক্রান্ত। আমরা অবিলম্বে এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি,” বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম, কাজী আবুল বাশার, হেলেন জেরিন খান, সাইমুম বেগম, আবুল কালাম আজাদ, ফোরকান-ই আলম উপস্থিত ছিলেন।