ছাত্রদলের কোন্দলের আগুন বিএনপির কার্যালয়ে

ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে আবারও ভাংচুর হয়েছে বিএনপি ভবন; জিয়াউর রহমানের মূর্তি ও খালেদা জিয়ার ছবি ভাংচুরের সঙ্গে পোড়ানো হয়েছে ওই ভবনে থাকা সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও।

নিজস্ব প্রতিবেদকজ্যেষ্ঠ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2016, 11:01 AM
Updated : 9 Feb 2016, 10:40 AM

রাজিব আহসান ও আকরামুল হাসান নেতৃত্বাধীন ছাত্রদলের ৭৩৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গত শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসন অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে ক্ষোভ চলছিল।

কমিটিতে পদ না পাওয়া একদল সোমবার বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে সামনে বিক্ষোভ শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এক পর্যায়ে ওই কার্যালয়ের সামনে থাকা দুটি মোটর সাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। এরপর একদল ভবনে ঢুকে নিচতলা জিয়ার ম্যুরাল ও খালেদা জিয়ার ছবি ভাংচুরের পর উপরে উঠে যায়।

তারা ভবনের চতুর্থ তলায় থাকা ছাত্রদলের কার্যালয়ে আগুন দেয়। আগুনে ওই কার্যালয়টি ভস্মীভূত হওয়ার পাশাপাশি পাশের যুবদল কার্যালয়ও আংশিক পোড়ে বলে জানান আগুন নেভাতে যাওয়া দমকলকর্মীরা।

এই অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর ছাত্রদলের ‘পদবঞ্চিত’ নেতা-কর্মীরাই ঘটিয়েছে বলে পল্টন থানার ওসি মোরশেদ আলম দাবি করেছেন।

তবে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘সরকারের এজেন্টরাই’ একাজ করেছে এবং সেজন্যই পুলিশ ‘নিশ্চুপ’ ছিল। 

২০১৪ সালে রাজিবকে সভাপতি এবং আকরামকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা দেওয়ার পরও বিক্ষুব্ধরা বিএনপি কার্যালয়ে ভাংচুর চালিয়েছিল। তখন ছাত্রদল থেকে কয়েকজনকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল।

তার তিন বছর বাদে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর আবার একই ঘটনা ঘটল।

পল্টন থানার ওসি মোরশেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিকাল ৪টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের ‘পদবঞ্চিতরা’ বিক্ষোভ শুরু করে এবং দুটি মোটর সাইকেল জ্বালিয়ে দেয়।

.

এরপর তারা ভবনের নিচ তলা এবং তিন তলায় ভাংচুরের পর চতুর্থতলায় গিয়ে অগ্নিসংযোগ করে বলে জানান তিনি।

ওই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয় দপ্তর রয়েছে। চতুর্থ তলায় রয়েছে ছাত্রদলসহ কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়।

আগুন লাগার পর অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর সদস্যরা ছুটে আসে। তবে নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই ছাত্রদলের কার্যালয় ভস্মীভূত হয় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মো. ইব্রাহিম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রদলের কার্যালয় ভস্মীভূত হওয়ার পাশাপাশি একই তলায় থাকা যুবদলের কার্যালয়ও আংশিক পুড়েছে।”

হামলার পর দেখা যায়, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই কক্ষের অফিসটি পুরোটাই ছাই হয়ে গেছে। আগুনে পুড়ে গেছে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি; পুড়েছে নতুনভাবে সাজানো ওই কক্ষের সিলিংও।

বিকাল ৩টা ৫০ মিনিট থেকে ৪টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ভাঙচুর, আগুন ও হামলার এই ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

বিএনপি কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিন ভাগে ভাগ হয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয়। একটি গ্রুপ আগেই থেকে চতুর্থ তলার ছাত্রদল কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। দ্বিতীয় গ্রুপটি ছিল বিএনপি কার্যালয়ের মূল ফটকে। তৃতীয় গ্রুপটি ছিল অফিসের বাইরে যারা মিছিল নিয়ে আসে।”

আগুন, মিছিল ও ভাঙচুর শেষ করে বিক্ষুব্ধরা দ্রুতই চলে যায় বলে ওই ভবনের সামনের এক চা দোকানি জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা দেখলাম চারতলায় আগুনের ধোঁয়া ও বিকট শব্দ; হুড়োহুড়ি করে একদল নামছে আগুন আগুন বলে। এর পরপরই ফকিরেরপুলের মোড়ের দিক থেকে বিক্ষুব্ধদের একটি মিছিল কার্যালয়ে সামনে আসে। আমরা এক রকম বুঝে উঠার আগেই সব কিছু শেষ হয়ে গেল।”

আবদুল মতিন নামে একজন পথচারী বলেন, আগুনের সময় সড়কের পূর্ব দিক থেকে ৩০/৪০ জন ছেলে ‘পকেট কমিটি মানি না-মানব না, নতুন কমিটি চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে আসছিল।

“আগুন বা কারা লাগিয়েছে জানি না। কিন্তু কার্যালয়ের ভেতর থেকে বের হওয়া ছেলেদের ওই মিছিলে যোগ দিতে দেখেছি।”

আবু ইউসুফ নামে একজন ছাত্র বলেন, “আমি উত্তরবঙ্গ থেকে এসেছি। ঘটনার সময়ে হামলাকারীদের নিজ হাতে শহীদ জিয়ার ম্যুরাল হকিস্টিক দিয়ে ভাঙতে দেখেছি। তারা চিৎকার করছিল, গালাগালি করছিল।”

ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি খেতে বাইরে ছিলাম। এ সময়ে দুষ্কৃতকারীরা ঘটনাটি ঘটিয়েছে।।”

ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিলের সময় এই ঘটনা হলেও নতুন কমিটিতে থাকা ছাত্রদল নেতাদের দাবি, হামলাকারীরা বহিরাগত।

সাত্তার জানান, আগুনে অফিসে টানানো জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের আলোকচিত্র পুড়িছে। কম্পিউটার কক্ষের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, অফিসের আসবাবপত্র, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, টেলিভিশনসহ সিলিং ফ্যানসহ সংগঠনের সব কাগজপত্র পুড়ে গেছে।

ভবনের নিচে প্রধান ফটকের কাছে জিয়াউর রহমানের মূর্তিটির গ্লাস ও থাই অ্যালুমিনিয়ামের আচ্ছাদনটি ভাঙা অবস্থায় দেখা যায়। মূর্তিতেও আঘাতেও চিহ্ন দেখা গেছে।

এছাড়া তৃতীয় তলায় বিএনপি কার্যালয়ের ব্রিফিং কক্ষের দরজা-জানালার গ্লাসও ছিল ভাঙা।

আগুন লাগার পর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর মধ্যেই সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে এসে বিএনপি নেতা রিজভী ‘সরকারের এজেন্টদের’ দায়ী করেন।

“বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পল্টন মডেল থানা বেশি দূরে না, ১০০ গজ থেকে ১৫০ গজ। অথচ এখানে দুষ্কৃতকারীরা আসছে, চারতলায় এসে আগুন ধরাচ্ছে। প্রকাশ্যে এই অফিসকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল মারছে। অথচ পুলিশ নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে। এটা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, কাদের প্রশ্রয়ে, কাদের সমাদরে দুষ্কৃতিকারীরা ভেতরে ঢুকছে এবং আগুন লাগাচ্ছে, আক্রমণ চালাচ্ছে।”

বিএনপি কার্যালয়ে হামলাকারী ও অগ্নিসংযোগকারী কাউকে গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য পুলিশের কাছে পাওয়া যায়নি।

ওসি মোরশেদ বলেন, জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ করছে।

ঘটনার পর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।