পাকিস্তানের চরিত্র বদলাবে না: নাসিম

পাকিস্তান ‘উলঙ্গ’ ও ‘লজ্জাজনকভাবে’ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2016, 07:33 PM
Updated : 7 Feb 2016, 07:34 PM

রোববার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ বিচারের সমালোচনা করে পাকিস্তানের বক্তব্যের জবাবে এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পাকিস্তানের চরিত্র কোনোদিনও বদলানো সম্ভব নয়। দোসরদের জন্য তাদের যে মায়াকান্না ও আস্ফালন সেটা ক্ষমাহীন অপরাধ।”

ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন আওয়ামী লীগের এই নীতি নির্ধারক।

গত ২২ নভেম্বর একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী বদর প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের পর 'উদ্বেগ' প্রকাশ করে বিবৃতি দেয় পাকিস্তান। এরপর ঢাকায় পাকিস্তানি হাই কমিশনারকে ডেকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে 'কড়া প্রতিবাদ' জানানো হয়।

এর এক সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানও বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে ডেকে একাত্তরে গণহত্যার দায় অস্বীকার করে।

এ ধরনের ঘটনাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের ‘নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ’ আখ্যায়িত করে দেশটির সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়ে আসছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “আমরা মনে করি, পাকিস্তানের বোধোদয় হবে। তারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করবে। না হলে আজ হোক কাল হোক বাংলাদেশের মানুষকে চিন্তা করতে হবে, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকবে কি না।”

সংবাদ সম্মেলনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে পাকিস্তানের নেতিবাচক বক্তব্যের বিষয়ে সার্কে আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বানও জানায় ১৪ দল।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসিম বলেন, “আশ্চর্য লাগে, বিস্ময় লাগে- এরা কি বাংলাদেশের নাগরিক?

“যখন আমরা বিজয়ের মাস অতিক্রম করলাম তখন এই খালেদা জিয়া ও তার সহকর্মীরা পাকিস্তানের দোসর হিসেবে কাজ করছে। এজন্য খালেদা জিয়া ও তার দোসরদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।”

গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক আলোচনা সভায় খালেদা মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, “আজকে বলা হয়, এতো লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানারকম তথ্য আছে।”

এরপর ২৫ ডিসেম্বর খালেদার ওই বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা জরিপ করে দেখতে বলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ‘নির্বোধের মতো মরেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তাদের এই বক্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি মানহানির মামলাও হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে পাকিস্তানের আপত্তিকর মন্তব্য ও শহীদদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়ার ‘কটাক্ষের’ প্রতিবাদে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় ঢাকায় মানববন্ধন করবে ১৪ দল।

এর আগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়ার সভাপতিত্বে ১৪ দলের বৈঠক হয়।

বৈঠকে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব আবদুল আউয়াল, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহদাৎ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।