হাই কোর্টের রায় স্থগিতে কাদের সিদ্দিকীর আবেদন মুলতবি

মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা রিট আবেদন খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর একটি আবেদন দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ড ওভার) রেখেছে চেম্বার আদালত।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2016, 09:26 AM
Updated : 7 Feb 2016, 09:26 AM

হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে  কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের এই সভাপতির করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী রোববার এই আদেশ দেন।

পরে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ব্যারিস্টার ড. মুহাম্মদ ইয়াসীন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “হাই কোর্টের রায় স্থগিত চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু আদালত কোনো স্থগিতাদেশ দেয়নি, দুই সপ্তাহের জন্য আবেদনটি স্ট্যান্ডওভার রেখেছে।

“আবেদনকারীপক্ষ এই সময়ের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল করবে বলেছে। ফলে এখন তাদের আবেদন অপেক্ষমান থাকছে।”

গত ৪ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীর করা রিট আবেদন খারিজ করে রায় দেয়।

এই রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন কাদের সিদ্দিকী, যা রোববার চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে।

আদালতে কাদের সিদ্দিকীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী।

অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী বলেন, “আদালত আবেদনটির শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি করে এ সময়ের মধ্যে লিভ টু আপিল করতে বলেছেন। এখন বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, ফলে এখন পদক্ষেপ নেওয়া সমচীন হবে না।”

মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীর করা রিট আবেদন গত বৃহস্পতিবার খারিজ করে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চ।

এর ফলে কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগের এই সভাপতির টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। একই সঙ্গে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনগত বাধাও দূর হওয়ার কথা ওইদিন জানিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ব্যারিস্টার ড. মুহাম্মদ ইয়াসীন খান।

ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগের কারণে শূন্য কালিহাতীর ওই আসনে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হতে কাদের সিদ্দিকীর দাখিল করা মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল ইসি।

অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের কারণ দেখিয়ে প্রার্থিতা বাতিলের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী রিট আবেদন করলে হাই কোর্ট স্থগিতাদেশে উপ-নির্বাচন আটকে যায়।    

হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এবং মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করলে ইসি গতবছর উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ভোটের দিন ঠিক হয় ১০ নভেম্বর। কাদের সিদ্দিকীসহ মোট ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আলীমুজ্জামান বাছাই শেষে কাদের ও তার স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকীসহ চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। ঋণ খেলাপের কারণ দেখিয়ে কাদের ও নাসরিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।

এরপর প্রার্থিতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন কাদের ও নাসরিন সিদ্দিকী। কিন্তু কমিশনের শুনানিতেও তাদের আবেদন টেকেনি।  

এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী অভিযোগ করেন, তাকে ‘ঋণ খেলাপি’ বানাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ‘ছলনার’ আশ্রয় নিয়েছে।

প্রার্থিতা ফিরে পেতে ২০ অক্টোবর হাই কোর্টে তিনি রিট আবেদন করলে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে পরদিন আদালত কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে নির্দেশসহ রুল দেয়।

হাই কোর্টের আদেশে ২২ অক্টোবর সব প্রার্থীদের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীকেও প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর তার মনোনয়নপত্র নিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে ২৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন।

পরদিন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন এবং ওই সময় পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখতে  বলা হয়।

এর ধারাবাহিকতায় গতবছর ২ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের আবেদনটি আপিল বেঞ্চে ওঠে। শুনানি শেষে আদালত তা নিষ্পত্তি করে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে দেওয়া রুল ৩১ জানুয়ারির মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিয়ে ওই সময় পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত করে।