জনগণের ঐক্য ছাড়া মৌলবাদ নির্মূল হবে না: অজয় রায়

মৌলবাদীদের প্রতিরোধে জনগণকে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক ড. অজয় রায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2016, 03:47 PM
Updated : 6 Feb 2016, 07:57 PM

শনিবার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দ্বিতীয় দিনের এক আলোচনা সভার সভাপতির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।

গত বছর বইমেলা চলার সময় টিএসসির কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় লেখক অভিজিৎ রায়কে; হামলায় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও আহত হন। তার এক যুগ আগে একই এলাকায়ই হামলার শিকার হয়েছিলেন লেখক হুমায়ুন আজাদ। 

এই দুটি হামলাসহ আরও ব্লগার, প্রকাশক হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিরা জড়িত বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। জঙ্গিদের হুমকির মুখে আছেন আরও লেখক-অধ্যাপক।

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িবক বাংলাদেশ, কোন পথে আমরা’ শীর্ষক সভায় অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, “বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার পেছনে রয়েছে সশস্ত্র মৌলবাদীরা। এদের প্রতিরোধে জনগণকে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

“জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে মৌলবাদী গোষ্ঠীর সমূলে উৎপাটন সম্ভব। এর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য তরুণদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অজয় রায়ের সভাপতিত্বে ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক মারুফ রসূলের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মোশতাক হোসেন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি জনার্দ্দন দত্ত নান্টু।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথ একটাই। সেটা হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথ।

“৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ যেমন আমাদের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে ওই একই ভাষণ আমাদের মূলমন্ত্র হতে পারে।”

আবুল বারকাত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৪১ লাখ। যুদ্ধে যে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয় তার ২৮ লাখ ছিল গ্রামের মানুষ। এই ২৮ লাখ মানুষের ২৫ লাখ ছিল ভূমিহীন প্রান্তিক মানুষ।

“স্বাধীনতা অর্জনের ৪৪ বছর পর ওই মানুষগুলোর অবস্থা দেখলেই আপনার বুঝবেন, কোন পথে বাংলাদেশ? একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কোনো শহুরে যুদ্ধ ছিল না; ছিল জনযুদ্ধ।”

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘বাই চান্স মুক্তিযোদ্ধা’ দাবি করে তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান ছিলেন ঘটনাচক্রে মুক্তিযোদ্ধা। এরকম ঘটনাচক্রে যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তারা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে কলমের খোঁচায় সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিলুপ্ত করেছিল।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সরকার ‘ছলচাতুরি’ করছে- অভিযোগ করে আবুল বারকাত বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অনুযায়ী লিখিত যুদ্ধাপরাধীর সংখ্যা ৩ হাজার ২৪৬ জন। দুইটা ট্রাইব্যুনাল থাকলে প্রতিবছর বিচার সম্ভব সর্বোচ্চ ১০ জনের।

“একটা ট্রাইব্যুনাল বন্ধ করা হয়েছে। তাহলে এই বিচার সম্ভব হতে কমপক্ষে ৫০০ বছর লাগবে। আমরা কি এতদিন অপেক্ষা করতে চাই? এজন্য তো দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেনি।”

মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান বলেন, “অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শব্দ দুটি ব্যবহার করেন। এ দুটি শব্দ তাদের কাছে পণ্য হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শব্দ ব্যবহার করে তারা ব্যবসা করছে।

“তা না হলে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও মানুষ ফুটপাতে ঘুমায় কেন? সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলা হয় কেন? শিশুদের উপর নির্যাতন হয় কেন? সরকার একদিকে উন্নয়ন করছে, আরেকদিকে গরীব আরও গরীব হচ্ছে, মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠছে।”