ডেইলি স্টারের ভূমিকা নিয়ে বিএনপিতেও প্রশ্ন  

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ডিজিএফআইয়ের সরবরাহ করা খবর যাচাই ছাড়া প্রকাশের ‘ভুল’ সম্পাদকের স্বীকারের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীপুত্রের পর এবার বিএনপির সমালোচনার মুখে পড়েছে ডেইলি স্টার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2016, 02:15 PM
Updated : 6 Feb 2016, 02:23 PM

জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ইংরেজি দৈনিকটিতে প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শনিবার এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে তা প্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

নাম উল্লেখ না করলেও দৈনিকটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের সমালোচনার কথাও রিজভীর কথায় আসে। আসে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে সংবাদপত্রটির ভূমিকার কথাও।

ডেইলি স্টারের রজত জয়ন্তি উপলক্ষে এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম গত বুধবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আলোচনা অনুষ্ঠানে জরুরি অবস্থার সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সরবরাহ করা ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর’ যাচাই ছাড়া প্রকাশ করে সাংবাদিকতা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বলে স্বীকার করেন।

এরপর জয় নিজের ফেইসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে জয় ‘সামরিক অভ্যুত্থানে উসকানি দিতে সাজানো ও মিথ্যা প্রচারণা চালানোর’ জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মাহফুজ আনামের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ছেলে ওই স্ট্যাটাস দেওয়ার একদিনের মধ্যে তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতাও সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের সময় দৈনিকটির ভূমিকা নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে প্রায় একই সুরে কথা বললেন।

রিজভী বলেন, “একটি ইংরেজি পত্রিকা আমরা সবাই পড়ি, মধ্যবিত্তের কাছে জনপ্রিয় পত্রিকা। কয়েকবছর আগে ১৯৯৮-৯৯ সালের দিকেই হবে, সেখানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে একটি সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছিলো- ট্রিবিউট টু জিয়া।

“সাম্প্রতিককালে দেখি শহীদ জিয়াকে শেখ মুজিবর রহমানের হত্যার সঙ্গে জড়িত করে ওই পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটা কেন করেন, কী উদ্দেশ্যে করেন, আমরা জানি না।”

ওয়ান-ইলেভেনের সময় এই দৈনিকের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “১/১১ পরে একই রকম পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-দুজনকেই। মাইনাস টু তত্ত্ব।”

জয়ের বক্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন, “আজকে সকালেও আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রধানমন্ত্রীর তনয় ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন যে একটি ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী। আমি জানি না তিনি (জয়) কীসের জন্য দিয়েছেন। আমরা কিন্তু কোনোদিন এধরনের কথা বলিনি।

“যারা ওয়ান-ইলেভেনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করিনি, অপপ্রচার করিনি, কুৎসা রটাইনি। যেসব গণমাধ্যমে জড়িত ছিল,তাদের বিরুদ্ধেও কখনোই বিএনপি চেয়ারপারসন অশ্রাব্য-কুশ্রাব্য কোনো কথা বলেননি।”

আওয়ামী লীগ না ছাড়লেও বিএনপি এসব ঘটনা ভুলে সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, “মানুষের ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। সেটাকে ক্ষমাও করতে জানি। বড় রাজনৈতিক দল এবং বৃহৎ মানুষ, যারা রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, দেশ পরিচালনা করেছেন, তাদের হৃদয় বিস্তৃত থাকতে হয়। অনেক কিছু আমরা ভুলে যাই, আমরা সেটাকে মনে রাখি না।”

‘শহীদ জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা বাস্তবায়ন পরিষদ’ আয়োজিত এই আলোচনা সভায় মুক্ত তথ্য প্রবাহের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার একটি তুলনাও তুলে ধরেন রিজভী।

“আজ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে মিডিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কুৎসা ও অশ্রাব্য ভাষায় কথা-বার্তা রটানো হচ্ছে। এখন গণমাধ্যম সঠিক সত্য কথাটা সবসময় বলতে পারছে না, কারণ তাদের মাথার ওপর একেবারে ধারাল তলোয়ারটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ফ্রি মিডিয়া নেই।”

এই প্রসঙ্গে বাকশালের কথা তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, “তারা অসংখ্য পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল একটি মাত্র কলমের খোঁচায়। শুধু বন্দনা হবে এক ব্যক্তির। একটি রাজনৈতিক দল দেশ পরিচালনা করবে। সেজন্য তাদের অনুগত ৪টি ছাড়া সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেটারই আভাস আমরা এখন পাচ্ছি।

“আর এই যে আজ অসংখ্য মিডিয়া যেটা জোর করে বন্ধ করতে পারছে না সরকার, সেটিই হচ্ছে জিয়াউর রহমান, গণতন্ত্র। সেটি হচ্ছে বিএনপি। আমি মনে করি, চাপ থাকবে। এর মধ্যেই গণমাধ্যম যদি ফ্রি মিডিয়া হয়ে দাঁড়াতে না পারে, তাহলে কারও কোনো অধিকার থাকবে না, কারও কোনো নিরাপত্তা থাকবে না।”

মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খলিলুল রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ- উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জাসাস সাধারণ সম্পাদক মনির খান বক্তব্য রাখেন।

আগামী ১৯ মার্চ অনুষ্ঠেয় দলের কাউন্সিলের বিষয়ে রিজভী বলেন, “বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল এবার মানুষের কাছে একটি নতুন আশাবাদ তৈরি করবে।”