“গতকালও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘পুলিশ সব সময় ভালো কাজ করে’। এই ধরনের ঢালাও লাইসেন্স দেওয়ার ফলেই তারা (পুলিশ) সীমা অতিক্রম করেছে,” বলেছেন তিনি।
ব্যাংক ও সিটি করপোরেশনের দুই কর্মকর্তাকে নির্যাতন নিয়ে সমালোচনার মধ্যে তিন দিন আগেই ঢাকায় এক চা বিক্রেতাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেও তিনি একইসঙ্গে পুলিশের প্রশংসা করে বক্তব্য দিচ্ছেন, যা এই বাহিনীকে বেপরোয়া করে তুলছে বলে সাবেক মন্ত্রী হাফিজের দাবি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশকে দলীয় বাহিনীর মতো ব্যবহার করছে বলে বিএনপি অভিযোগ করে আসছে আগে থেকেই।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভায় এই প্রসঙ্গটি তুলেই পুলিশের সমালোচনা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ।
তিনি বলেন, “পুলিশ বাহিনী বেপরোয়া অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, যেহেতু তারা একটি দলের পুলিশ বাহিনী। তাদেরকে রাজনৈতিক কাজে নিয়োগ করা হচ্ছে। অথচ আমাদের পুলিশ বাহিনী এরকম ছিল না। তাদের ভালো কাজ করার ঐতিহ্য রয়েছে।”
এজন্য সরকারকে দায়ী করার পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিবাদী হয়ে না ওঠার সমালোচনাও করেন হাফিজ।
“আজকের বাংলাদেশ দুঃশাসনের প্রতিচ্ছবি। এদেশ পুলিশ স্টেট। সাম্প্রতিককালে চায়ের দোকানদার বাবুল মিয়া যেভাবে নিহত হয়েছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। কোথায় দেশের সেই সুশীল সমাজ? তাদের কোনো প্রতিবাদ দেখি না।”
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলারও সমালোচনা করেন মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ।
“মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা যদি ৩০ লাখের থেকে কমও হয়, তাতে পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা আমাদের কমবে না। যদি বেশি হয়, সেটা ইতিহাসবিদরা বের করে নেবেন। সেজন্য দেশনেত্রীকে কেন মিথ্যা মামলার সম্মুখীন হতে হবে?”
রাজনৈতিক কারণেই খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের শ্বাশুড়ি ইকবালমান্দ বানুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেন হাফিজ।
তিনি বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হওয়া উচিত, যাদের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের কারণে মামলা হওয়া উচিত, তারা সব ফ্রি। যারা দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ধ্বংস করল, সোনালী ও বেসিক ব্যাংক থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করল, তাদের তো গ্রেপ্তার করা হয় না। গ্রেপ্তারের হুমকি শুধু বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতাদের বিরুদ্ধে।”
নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস থাকায় এক অনুষ্ঠান থেকে মন্ত্রীদের চলে আসার খবরের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতা বলেন, “বিশ্ব যাকে সম্মান দেয়, নিজ দেশে তার সম্মান নেই।
“কালকে (শুক্রবার) তিনি একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছেন দাওয়াত পেয়ে। সরকারের মন্ত্রীরা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেছেন। কী জন্য? তাদের নেতাকে খুশি করার জন্য!”
শেখ হাসিনার উদ্দেশে হাফিজ বলেন, “দেশকে আর ধ্বংস করবেন না। আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, অনেকদিন ক্ষমতায় থেকেছেন, এবার গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে দিন।
“যদি গণতন্ত্র না থাকে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবে। সেখানে জঙ্গিবাদ আস্তে আস্তে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। নইলে বাংলাদেশ কাশ্মিরের অবস্থা হবে।”
হাফিজ যে সভায় বক্তব্য রাখেন তার বিষয় ছিল- ‘কাশ্মিরে জাতিসংঘের ভূমিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির বাধাসমূহ’। ‘অল কমিউনিটি ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন এর আয়োজন করে।
বিশ্ব রাজনীতির সমকালীন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে হাফিজ বলেন, “কোল্ড ওয়ার বিটুইন ইউএস অ্যান্ড রাশিয়া আবার শুরু হওয়ার আলামত দেখা যাচ্ছে। বৃহৎ প্রতিবেশী এবং আরেকটি উদীয়মান শক্তি চীন ধীরে ধীরে বিশ্ব বিভাজিত হতে যাচ্ছে। এ সময়ে বাংলাদেশের উচিত এমন একটি পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা, যা দেশকে আরও সুরক্ষিত করবে।
“আমরা যদি প্রতিবেশী দেশের পকেটে চলে যাই, এদেশের দেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার যদি ক্রমাগত বঞ্চিত হয়, তাহলে আমাদের অবস্থা একদিন ইরাক অথবা সিরিয়ার মতো হতে পারে। যেখানে গণতন্ত্র নেই, সেখানে আফগানিস্তান ও কাশ্মিরের মতো অবস্থা হতে বাধ্য।”
আশরাফ উদ্দিন বকুলের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান, সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, তাঁতী দলের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বক্তব্য রাখেন।