পৌর নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়ে এলেন বিএনপি নেতারা

পৌরসভা নির্বাচন অন্তত ১৫ দিন পেছানোর দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2015, 10:33 AM
Updated : 29 Nov 2015, 10:49 AM
রোববার বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ইসি সচিবালয়ে গিয়ে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি জানিয়ে আসেন।

সংসদ সদস্যদের স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার সুযোগ না দেওয়ার বিধান বহাল রাখার দাবিও রয়েছে তাদের।

৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে ঘোষিত পৌর নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী দলীয় মেয়র প্রার্থী প্রত্যয়নকারীর নাম জমা দেওয়ার একদিন বাদেই ইসিতে যায় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন শামসুজ্জামান দুদু, এস এম আবদুল হালিম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সুজাউদ্দিন।

এক ঘণ্টা সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনের বিষয়ে নিজেদের আপত্তি-অনাপত্তির বিষয়গুলো তুলে ধরেন সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির নেতারা।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে ওসমান ফারুক সাংবাদিকদের জানান, ‘তাড়াহুড়ো’ করে তফসিল ঘোষণা করায় অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

জানুয়ারিতে প্রায় ৫০ লাখ নতুন ভোটারকে অন্তর্ভুক্ত করে ভোট নেওয়া, দলের মহাসচিবসহ গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি, সাংসদদের প্রচারণায় বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা বহাল, দলীয় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

ভোট ১৫ দিন পেছানোর দাবি তুলে ওসমান ফারুক বলেন, “ভোট পেছানোর বিষয়ে আইনি বাধার কথা সিইসি আমাদের জানিয়েছেন। আমরা বলেছি, প্রয়োজনে আইন সংশোধন করা যেতে পারে। মানুষের প্রয়োজনে আইন। ইসি চাইলে তা সরকারেরও কোনো বিষয় নয়।”

বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করায় ভোটে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ থাকছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“দলের মহাসচিবকে মুক্তি না দিলে, নেতা-কর্মীদের মুক্তি না দিলে, আমরা নির্বাচন করতে পারব না। এভাবে ধরপাকড় হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাদের মুক্তি দিয়ে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”

নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই-ইসির এমন অবস্থানে দলীয় পর্যায়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান ওসমান ফারুক।

“সিইসি তো বলেছেন, আইনগত বাধা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ভোট পেছাবে না, এমন সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানালে আমরা আলোচনা করে দেখব কী করা যায়। আমরা গণতান্ত্রিক দল, জনস্বার্থ বিবেচনা করে দেখব, কোনটি বেশি প্রয়োজন।”

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়ে আসছিল বিএনপি। সর্বশেষ গত এপ্রিলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলেও জালিয়াতির  অভিযোগ তুলে ভোট গ্রহণের মাঝপথে বর্জনের ঘোষণা দেয়।

স্থানীয় সরকারের আইন সংশোধনের ফলে এবারই প্রথম পৌরসভায় মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। অর্থাৎ বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বেন।

আইন সংশোধনের পর পৌর নির্বাচনের বিধিমালাও নতুন করে তৈরি করেছে ইসি। এতে প্রার্থীদের পক্ষে সংসদ সদস্যদের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রাখা হয়েছে।  

বিএনপির প্রতিনিধি দল যাওয়ার আগে শনিবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী ও প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দল ইসিতে গিয়ে সংসদ সদস্যদের প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় দাবি জানায়।

ওসমান ফারুক বলেন, “জাতীয় পার্টিও এ দাবি জানায়! আমি অবাক হয়েছি। আওয়ামী লীগের তো এমন দাবি করা স্বাভাবিক। তবে আমরা জোর দাবি জানিয়েছি-কোনোভাবে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ দেওয়া যাবে না, কোনোভাবে তারা যেন প্রভাব খাটাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

বিএনপির দাবি মেনে ভোট পেছাতে আইন সংশোধন না করলে ও এমপিদের প্রচারণার সুযোগ দিলে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অবস্থান ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ হবে বলে মনে করেন ওসমান।

“সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসিকে অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে। এর বাইরে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে শুধু ইসি নয়, সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হবে। ইসি সরকারের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে।”