স্বৈরশাসককে গণতান্ত্রিক সরকারে রাখা দুঃখজনক: ডা. মিলনের মা

পতিত সামরিক শাসককে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের শরিক রাখা ‘দুঃখের’ বলে মন্তব্য করেছেন নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের মা সেলিনা আখতার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2015, 06:30 PM
Updated : 27 Nov 2015, 06:30 PM

সাবেক সামরিক শাসক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের বিচার দাবি করেছেন তিনি।

ডা. মিলনের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি দাবি করেন।

সেলিনা আখতার বলেন, “স্বৈরশাসকের পতনের জন্য আমাদের বীর সন্তানরা জীবন দিয়েছে। আর সেই স্বৈরাচারকে গণতান্ত্রিক সরকারের শরিক করা হয়েছে। সন্তান হারানো মায়েদের জন্য বিষয়টি খুবই দুঃখের ও কষ্টদায়ক।”

তিনি বলেন, “সারা বিশ্বে স্বৈরশাসককে দেশ ছাড়তে হয় নতুবা বিচারের মুখোমুখি করে কঠোর শাস্তি দিতে দেখা যায়। অথচ আমাদের এখানে স্বৈরশাসককে ছুড়ে না ফেলে ক্ষমতাসীন দলে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এটা কেবল বাংলাদেশে সম্ভব হয়েছে।”

স্বৈরশাসকের বিচার দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছেলে হারানো এই মা।

১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন সামরিক শাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পাশে গুলিতে নিহত হন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন যুগ্মমহাসচিব ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. মিলন।

এরশাদ বর্তমানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। তার দলের কয়েকজন সরকারের মন্ত্রিসভায়ও আছেন।

ডা. মিলনের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আলোচনা সভার আয়োজন করে শহীদ ডা. মিলন সংসদ, যারা দিনটিকে ‘গণ-অভ্যুত্থান ও ডা. মিলন দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে।

মিলনের মা বলেন, “স্বৈরশাসককে ক্ষমতাসীন দলে রেখে গণতন্ত্র চলতে পারে না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ যতটুকু এগিয়েছে, একদিন তা মুখ থুবড়ে পড়বে। স্বৈশাসকের বিচার করতেই হবে।”

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ডা. মিলনের অবদানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘খর্ব’ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন সেলিনা আখতার।

“শহীদ মিলনের অবদানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে খর্ব করা হয়েছে। জাতীয়ভাবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা রাস্তা মিলনের নামে নামকরণ করা হয়নি। যখনই সরকার পরিবর্তন হয়েছে আশ্বাস দিয়েছে; কোনো বাস্তবায়ন হয়নি।”

মিলনের স্মৃতি ও অবদান ধরে রাখা এবং গণতন্ত্রের জন্য জীবন দানকারী শহীদদের তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ডা. মিলনের নামে কোনো রাস্তা কিংবা ভবনের নামকরণ করার দাবি জানান সেলিনা আখতার।

সভায় উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে লক্ষ্য করে মিলনের মা বলেন, “হাসানুল হক ইনুর দলেরই একজন কর্মী ছিল মিলন। তিনি (ইনু) মিলনের নামে রাস্তা নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু বাস্তবায়ন করেননি।”

জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার বক্তব্যে বলেন, “মিলনের নামে একটি মেডিকেল কলেজের অডিটোরিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে রাস্তার নামকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

“আর আপনারা (মিলনের মা) কোন সড়কটি মিলনের নামে করতে চান সেটিও জানাবেন।”

সভায় ডা. মিলন সংসদের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান ও ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন বক্তব্য রাখেন।