বিএনপি সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছে: সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি নিয়ে মন্তব্য ও বিবৃতিতে যু্দ্ধাপরাধীদের পক্ষে বিএনপির অবস্থানের প্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করছে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2015, 10:43 AM
Updated : 24 Nov 2015, 10:43 AM

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের নেতারা বলেছেন, বিএনপির বক্তব্যের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের শত্রুপক্ষ পাকিস্তান সরকারের বিবৃতির ‘হুবহু মিল’ রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে ফোরামের অবস্থান তুলে ধরতে এবং ‘যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে বিএনপির নগ্ন সমর্থন ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের’ প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

শনিবার মধ্যরাতে সাবেক এই দুই মন্ত্রীর ফাঁসির কার্যকরের আগ মুহূর্তে বিএনপির বিবৃতি আসে। তার আগে সন্ধ্যায় বিবৃতি পাঠায় তাদের জোটসঙ্গী দল জামায়াত। দুটি দলই মনে করে, তাদের নেতারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। 

রোববার প্রথম প্রহরে দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর এক বিবৃতিতে উদ্বেগের কথা জানায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব বলেন, “সাকা চৌধুরীকে নিয়ে বিএনপির বক্তব্য আর পাকিস্তানের বক্তব্যের মধ্যে হুবহু মিল রয়েছে। পাকিস্তান বলেছে, পাকিস্তানের সমর্থকদের হত্যা করা হয়েছে।

“তাহলে আমরা বলব, সঠিক কাজটি হয়েছে। পাকিস্তানের সমর্থকদের হত্যা করেছি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল, আমাদের বিরোধিতা করেছিল।”

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রতিবাদ জানিয়ে হারুন হাবীব বলেন, “বিএনপি বলেছে, সাকা চৌধুরীর ফাঁসি বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে হয়নি, সরকারের নির্দেশনায় হয়েছে। বিচারক রায় দেয়নি, রায় দিয়েছে সরকার। এর মানে হচ্ছে- বিচার ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা এবং সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া।”

সালাউদ্দিন কাদের-মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে পাকিস্তান উদ্বেগ প্রকাশ করায় সংবাদ সম্মেলনে ক্ষোভ ও নিন্দা জানান হয়।

ফোরামের সহ-সভাপতি সাবেক সেনাপ্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, “পাকিস্তান কূটনীতিক শিষ্টাচার লংঘন করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। এর আগেও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরের প্রেক্ষিতে তারা একই কাজ করেছিল।

“দেশটির এ ধরনের ভূমিকা অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়। সরকার ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনারকে ডেকে প্রতিবাদ করেছে। সরকারের এই ভূমিকার সঙ্গে একাত্মতা জানাচ্ছি।”

ভবিষ্যতে পাকিস্তান এ ধরনের আচরণ করলে তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফোরামে নালিশ করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনকারী হিসেবে চিহ্নিত ১৯৫ জন পাকিস্তানির বিচারের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান ফোরামের সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ।

“বাংলাদেশে তাদের সহযোগীদের বিচার হচ্ছে। সাথে সাথে পাকিস্তানে চিহ্নিত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে হবে। এই বিচারের দাবিতে আমরা সারা দেশে আন্দোলন গড়ে তুলব।”

দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি উঠলেও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম এখনও এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়।

তবে হারুন হাবীব বলেন, “যুদ্ধাপরাধী দল ও ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজে ব্যবহার করা যায় কি না- তা ভেবে দেখা যেতে পারে।”

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের সমালোচনাকারী মানবাধিকার সংগঠনগুলোরও সমালোচনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, একটি রাষ্ট্র ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের মধ্যে অন্যতম।

“মানবাধিকার রক্ষার নামে জন্ম এসব সংগঠনের তৎপরতা হত্যাকারী, মানবাধিকার হরণকারীদের, নারী নির্যাতনকারীদের পক্ষে গিয়ে নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”