যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বিদেশে বসে ষড়যন্ত্রে খালেদা: হাসিনা

সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্য খালেদা জিয়াকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের উদ্দেশ্যে বিদেশে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2015, 10:16 AM
Updated : 2 Nov 2015, 01:15 PM

বিদেশি দুই নাগরিকসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের অঙ্গীকার করে তার জন্য দেশের মানুষের সহযোগিতাও চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

পাশাপাশি ষড়যন্ত্রকারীদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “তাদের সাবধান করতে চাই। যারা বাংলাদেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত করতে চায়, তাদের স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের স্থান হবে না।”

যুদ্ধাপরাধী সাবেক দুই মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মো. মুজাহিদের আইনি কার্যক্রমের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে দুই বিদেশি খুন এবং প্রকাশকদের উপর হামলার প্রেক্ষাপটে সোমবার এক জনসভায় আসেন প্রধানমন্ত্রী।

জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসভার শুরুতেই পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের উল্টোযাত্রার বিষয়টি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলের সমালোচনার পর তাদের এবারের আন্দোলনের প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, তাতে ব্যর্থ হয়ে এখন খালেদা জিয়া ‘দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত হয়েছেন।

“রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে তিনি গেছেন বিদেশে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এখন তিনি গুপ্তহত্যায় নেমেছেন। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী, লেখক, প্রকাশক সবাইকে গুপ্তহত্যা।”

চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যাওয়ার পর দেড় মাস ধরে সেখানে অবস্থান খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি রয়েছেন ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে, যিনি শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি।  

সম্প্রতি ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি খুন, গত শনিবার ঢাকার দুটি স্থানে হামলা চালিয়ে এক প্রকাশককে খুন এবং আরও তিনজনকে কুপিয়ে জখমের যোগসূত্র রয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন সরকার প্রধান।    

তিনি বলেন, “এদেশের মানুষকে নিয়ে বারবার ষড়যন্ত্রের খেলা হয়েছে। কোনো কোনো মহল বলছে, আইএস আছে, জেএমবি আছে। যখন আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি, রায় কার্যকর হচ্ছে, তখন এই খুনিদের রক্ষার করার জন্যই এই গুপ্তহত্যা।

“যখনই দেশের মানুষ স্বস্তিতে তখনই এই হত্যাকাণ্ড, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এই হত্যাকাণ্ড।”

এই গুপ্তহত্যার পেছনে বিএনপি-জামায়াতের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যাকেই ধরা হয়, তারা শিবিরের অথবা বিএনপির লোক।”

যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনে বিএনপিকে দায়ী করে তিনি বলেন, “আমাদের লাখো শহীদের রক্তে রাঙা পতাকা তাদের (যুদ্ধাপরাধী) হাতে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আজ যারা সাজাপ্রাপ্ত তারা তাদের কেবিনেটে বসিয়েছিল।

“পাকিস্তানের পেয়ার এখনও তিনি ভুলতে পারেন নাই। ওনার পেয়ারে পাকিস্তানের জন্যই এত ভোগান্তি।”

এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করার বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, “গুপ্তহত্যা যারা করছে, তাদের কিছুকে খুঁজে বের করা হয়েছে। আরও হবে। তাদের লিংক কোথায়, বড় ভাই কোথায়, তা বের করে এই বাংলার মাটিতে শাস্তি দেওয়া হবে।

“খুনিদের শাস্তি দেবই দেব, আমি শুধু বাংলাদেশের মানুষের সহযোগিতা চাই।”

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুনের রাজত্ব কায়েম করে দেশকে ভিন্ন পথে নেওয়ার চেষ্টার জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন শেখ হাসিনা।

“জিয়াউর রহমান খুনিদের রাজত্ব কায়েম করেছিল,” মন্তব্য করে শেখ হাসিনা ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলের কথা তুলে ধরেন।

“খুনের রাজত্ব কায়েম করে দেশকে ভিন্ন পথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। খালেদা জিয়া একটা সন্ত্রাসী রাষ্ট্র তৈরি করেছিল। জিয়াউর রহমানের পথ ধরে তার স্ত্রী খুনের রাজত্ব  কায়েম করেছিল।”

“দেশের মানুষ অশিক্ষিত থাকবে, দরিদ্র থাকবে, ধুঁকে ধুঁকে মরবে এটাই তিনি চান। গুপ্তহত্যা করুক আর যাই করুক এদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না,বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না,” বাবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে বলেন শেখ হাসিনা। 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পথে আওয়ামী লীগের ঢাকা নগরীর একটি ওয়ার্ডের মিছিল

বক্তব্যের শুরুতেই ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনাবলি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মোশতাক আহমেদের পর জিয়াউর রহমান খুনিদের পুনর্বাসিত করেছিলেন।

“খুনিদের বিচার করা হয়নি, বরং বিভিন্নভাবে খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে বিচারের পথ বন্ধ করা হয়েছিল।”

আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাত বছরের শাসনামলে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “মানুষের মনে শান্তি দেখলে একজনের মনে অশান্তি শুরু হয়।”

সমবেত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা বলতে পারেন, কার মনে এই অশান্তি।”

সবাই এক সঙ্গে বলে ওঠেন, “খালেদা জিয়া।”

জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং আশপাশের জেলাগুলো থেকে নেতাকর্মীরা বাস-ট্রাকে করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে থাকে।

ক্ষমতাসীন দলের জনসভা ঘিরে উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যার পর গ্রেপ্তার করা হয় মুক্তিযুদ্ধের শীর্ষ চার সংগঠক তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে।

একই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় এই চার নেতাকে। এরপর থেকে জাতীয় কলঙ্কময় এই দিনটি ‘জেল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।