দুরভিসন্ধি থেকে স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন: বিএনপি

স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে আইন সংশোধনে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাসের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি বলেছে, সরকারের এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য নিজেদের নেতাদের জিতিয়ে আনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2015, 01:06 PM
Updated : 12 Oct 2015, 01:06 PM

সোমবার মন্ত্রিসভায় আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন একথা বলেন।

তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা মামলা-হামলার শিকার। তারা হুলিয়া নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমন একটা প্রেক্ষাপটে যদি দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়, তাহলে সেই নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থীর পক্ষে নেতা-কর্মীদের কাজ করা কিংবা অংশগ্রহণ করা সম্ভব হবে না।

“সরকার বিষয়টি বুঝতে পেরে, বিরোধী দলকে রাজনীতি ও নির্বাচনী ময়দান থেকে দূরে সরিয়ে রেখে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো একই পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চাচ্ছে।”

ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভা নির্বাচনের আগেই স্থানীয় সরকার আইন পরিবর্তনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা আগেই এর পক্ষে অবস্থান জানিয়ে আসছিলেন।

রিপন বলেন, “তারা নিজেদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করে বিদেশিদের বোঝাতে সচেষ্ট হবেন যে তাদের সরকার ও দলের পক্ষে জনগণের সমর্থন রয়েছে। এটি একটি মেকি কৌশল। এই মেকি কৌশলের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের সংকট থেকে উত্তরণ হবে না।”

তিনি স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন না করে নির্দলীয়ভাবে নির্বাচনের বর্তমান পদ্ধতি চালু রাখতে সরকারের  প্রতি আহ্বান জানান।

“স্থানীয় সরকারের বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আমরা দাবি করেছিলাম যেন সংশ্লিষ্ট সব মহলের মতামত যাচাই করা হয়। কিন্তু সরকার আমাদের দাবিকে পাশ কাটিয়ে একগুয়েমি মনোভাব প্রদর্শন করে তড়িঘড়ি করে আজ এই সংক্রান্ত পাঁচটি আইনের সংশোধন প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন কেরেছে। আমরা এতে বিস্মিত হয়েছি।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি পাশ কাটাতেও দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের এই উদ্যোগ বলে বিএনপির দাবি।

ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন নির্বাচন আইন সংশোধনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।

ডিসেম্বরের মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকায় ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন (পৌরসভা) (সংশোধন) আইন-২০১৫’ ভেটিংয়ের পর অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

রিপন অভিযোগ করে বলেন, এই আইন সংশোধন হলে তা জটিলতা তৈরি করবে।

“সরকার কিন্তু সব ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা নির্বাচন করছে না। যেসব প্রতিষ্ঠানের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়নি, সেসব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত মেয়র, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও মেম্বারগণের পদে থাকা নিয়ে তখন প্রশ্ন উঠবে। কারণ এক দেশে দুটি আইন তখন চলবে।”

“এক আইনে দলীয় প্রতীক ছাড়া কিছু লোক নির্বাচিত হয়েছেন। আবার অধ্যাদেশ জারি হওয়া পরে নতুন আইনে দলীয় প্রতীক ও মনোনয়নে নির্বাচিত হবেন অন্যরা।”

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিতদের মেয়াদ ফুরোনোর পর প্রশাসক নিয়োগের বিধানও স্থানীয় সরকারের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করে রিপন। 

“পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে বা নতুনদের শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত সংসদ সদস্যরা তাদের স্ব স্ব পদে বহাল থাকতে পারেন। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। এতে স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকার যে ধারাবাহিকতা সাংবিধানিকভাবে থাকার কথা, তা ক্ষুণ্ন হবে বলে আমরা মনে করছি।”

সংবাদ সম্মেলনে রিপনের পাশে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার, তকদির হোসেন জসিম।