খালেদা বিদেশে বসে দেশে খুন করাচ্ছে: হাসিনা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বিদেশি হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2015, 08:28 AM
Updated : 10 Oct 2015, 10:26 AM

তিনি বলেছেন, বিদেশে বসে বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন খালেদা জিয়া।

প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের এই ধরনের বক্তব্যে তদন্তে বিঘ্ন ঘটবে বলে বিএনপির আশঙ্কা প্রকাশের মধ্যে শনিবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা একথা বললেন।

সম্প্রতি ছয় দিনের ব্যবধানে ঢাকায় ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা এবং রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশিওকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা, যা নিয়ে সারাবিশ্বেই আলোচনা চলছে।

শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসনকে ইঙ্গিত করে বলেন, “দেশে থেকে দেশের মানুষ হত্যা করেছে। বিদেশে বসে এখন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। বিদেশে গিয়ে নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।”

স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে রয়েছেন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের শাসনে গণতন্ত্র নেই দাবি করে বিষয়টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “বিদেশে লবিস্ট রেখেছেন। ইউরোপ, ইউএসএ, ইউকে’তে বদনাম আর প্যানিক ছড়াচ্ছে। বিএনপি-জামাত, তাদের অনেক টাকা আছে। বিদেশে বসে তারা দেশের বদনাম করছে।

“বিদেশে বসে বাংলাদেশে যে বিদেশি থাকে, তাদের হত্যা করে, তাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।”

নির্বাচন বানচালের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বিএনপি তাদের আন্দোলনের কৌশল বদলেছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

“দেশে থেকে দেশের মানুষ মেরেছেন। আর, বিদেশে গিয়ে বিদেশি মানুষ মারছে। এটা তার (খালেদা জিয়া) নতুন কৌশল। আন্দোলনের কৌশল পাল্টেছেন। দেশে যারা বিদেশি মানুষ আছে, তাদের মেরে উনার আন্দোলন।”

শেখ হাসিনা বলেন, “দেশ যখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মানিত হয়, তখন তাদের (বিএনপি-জামাত) আত্মপীড়ন শুরু হয়। তখনই তারা হত্যা-খুন করে দেশের বদমান করে।”

বিএনপি-জামায়াত জোটের ‘অপকৌশলের’ বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

বরিশালসহ কয়েকটি জেলা আইনজীবী সমিতিতে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল হক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক, বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি আনিসউদ্দীন শহীদ ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ মনিরুল হাসান, চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ইব্রাহিম হোসেন বাবুল, চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি মুজিবুল হক চৌধুরী, গোপালগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী খান এবং গাজীপুর আইনজীবী সমিতির সাবে সভাপতি আজমতউল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বক্তব্য রাখেন।

আইনজীবী নেতাদের সবাই নিজ নিজ জেলায় আইনজীবী সমিতির জন্য নতুন ভবন নির্মাণের এবং সরকারি আইন কর্মকর্তাদের ভাতা বাড়ানোর দাবি জানান।

তাদের কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, “আপনাদের দাবি অনেক। আমরা দেখব, কীভাবে সমাধান করতে পারি।”

সরকারি আইন কর্মকর্তাদের ভাতা প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, “এখনকার যুগে ধান কাটার জন্য দিনমজুর নিতে গেলেও যে টাকা দেওয়া হয়, তাও পায় না।”

নিম্ন আদালতের সরকারি আইন কর্মকর্তাদের ভাতা বাড়াতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।

উচ্চ আদালতের সঙ্গে নিম্ন আদালতের অনলাইনে যোগাযোগ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “মানুষ বিচার চায়। বিচার চাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমার মতো কেউ বিচার বঞ্চিত হোক, তা চাই না।”

এপ্রসঙ্গে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কথাও বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।