বিশ্ব উন্নয়নের সঙ্গে ভোট নিয়েও আগ্রহী: বিএনপি

বিশ্ববাসী নির্বাচনের চেয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে বেশি আগ্রহী বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2015, 05:15 PM
Updated : 4 Oct 2015, 05:15 PM

রোববার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, “বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য বিশ্বাস করে না।”

জাতিসংঘ সফর থেকে ফিরে রোববার দুপুরে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবেশেখ হাসিনা বলেন, “রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, মন্ত্রী যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, কেউ তো বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক সঙ্কট কী, এটা নিয়ে কোনো আলোচনাই করে নাই, বা নির্বাচন, কোনোকিছু নিয়েই আলোচনা করেনি। বরং বাংলাদেশের উন্নয়ন বা অগ্রযাত্রাকেই তারা সব থেকে বেশি সাধুবাদ দিয়েছে, প্রত্যেকেই।”

এরপর সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে রিপন বলেন, “সরকার প্রধান সংবাদ সম্মেলনে একটি কথা বলেছেন, একটি বার্তা সংস্থা হেডিং করেছে, ‘ভোট নয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে বিশ্ব আগ্রহী’। আমরা তার এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করছি না। ভোটকে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি যে তথাকথিত উন্নয়নের কথা বলেছেন, এর সঙ্গে আমরা ভিন্নমত পোষণ করি।

“আমরা মনে করি, গ্লোবাল ডেমোক্রেটিক ভিলেজে পৃথিবীর সকল উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলো জনপ্রতিনিধিত্বশীল শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। আমাদের উন্নয়ন সহযোগী বন্ধুরা যেমন উন্নয়ন নিয়ে আগ্রহী, তেমনি ভোট নিয়েও আগ্রহী।”

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি বলছে, বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে।

অর্ধেকের বেশি সংসদীয় আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত ও্ই সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের দাবিও জানিয়ে আসছে দলটি।

রিপন বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, উন্নয়ন অংশীদাররা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার থাকুক, জনগণ স্বশাসিত হোক, তারা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হোক, সেটা তারা চায়।”

সরকারের বলা উন্নয়নের বিষয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “যখন দেখি লুটতরাজের উন্নয়ন চলছে, ব্যাংক ডাকাতি চলছে, ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দেওয়া হচ্ছে, প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে। সেটাকে কোনোভাবে উন্নয়ন বলা যায় না।”

খালেদা জিয়াকে টিপ্পনি কেটে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিপন বলেন, “এটা অত্যন্ত অরুচিকর ও নিন্দাজনক। এর প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই।

“প্রধানমন্ত্রী একটি রাজনৈতিক দলেরও প্রধান। তার কাছ থেকে নতুন প্রজন্ম, তরুণ যুব সম্প্রদায় থেকে শুরু করে আপামর জনগণ রুচিবোধ সম্পন্ন দায়িত্বশীল বক্তব্য প্রত্যাশা করে। কিন্তু তিনি যখন অপর আরেক বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান, যিনি তিন তিন বার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তার সম্পর্কে অরুচিকর মন্তব্য করেন, তখন সরকার প্রধানের দৃষ্টিভঙ্গি ও রুচি নিয়ে মানুষ হতাশাই হন না, লজ্জিত হন, দুঃখও পান। কাউকে অপমান করে, কারও প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে কেউ কখনও বড় হতে পারে বলে আমরা মনে করি না।”

দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিএনপি-জামায়াতের মদদ রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতের প্রতিক্রিয়ায় রিপন বলেন, “ তদন্ত পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে যে বক্তব্য এসেছে, এটা বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে। একথা বলে প্রকৃত হত্যাকারীদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়, তাতে তদন্তকারীদের পক্ষে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে কষ্ট হবে।”

দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এবং জাপান ও ইতালির গোয়েন্দা সংস্থাকে সম্পৃক্ত করার দাবিও জানান বিএনপি নেতা।

সংবাদ সম্মেলনে রিপনের সঙ্গে ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন।