উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা: ফখরুল

ইতালীয় নাগরিক খুনের ঘটনায় বিএনপি নেতা আব্দুল মঈন খানের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়াকে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর চেষ্টা বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2015, 09:19 AM
Updated : 30 Sept 2015, 01:03 PM

বুধবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল বলেন, “বিষয়টা হচ্ছে, এ ধরনের কথা-বার্তা তারা সব সময় বলে আসছেন। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করে থাকেন তারা।”

জঙ্গি হামলার শঙ্কায় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের সফর নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। 

এই হত্যার প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক জুজুর ভয় দেখিয়ে’ সরকার নিজেই এখন তার শিকারে পরিণত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গ টেনে যুক্তরাষ্ট্রে সফররত প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এখন তো সন্দেহ হয় যে, উনাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত, ওই ঘটনার সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা আছে কি না। আমি দেশে ফিরে সে ব্যবস্থাও করব।”

বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল’ করতে চায়, তারাই এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “যখন রাষ্ট্র পরিচালনা ও সুশাসনের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আসে, তখন নিঃসন্দেহে অন্যের উপর দোষারোপ করে তারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চান।’’

কারাবাস ও যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা শেষে নয় মাসের বেশি সময় পর বুধবার বেলা ১১টার দিকে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিজের চেম্বারে আসেন বিএনপির মুখপাত্র। সেখানে প্রায় ৪০ মিনিট অবস্থানের সময় দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে তিনি কথা বলেন, সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা ‘পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “একদিকে তাদের মন্ত্রীদের মধ্যে অনেকে বলেন, এখানে জঙ্গিবাদ আছে। আবার অনেকে বলেন, এখানে কিছু নেই। এটা পরস্পরবিরোধী অবস্থান।

“এই পরিস্থিতি তারাই সৃষ্টি করেছেন। আজ দেশে যা কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার কারণ হচ্ছে- দেশে সুশাসনের অভাব, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অভাব ও গণতন্ত্রের অভাব।”

ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেল্লাকে হত্যার ঘটনাকে ‘সরকারের ব্যর্থতা’ অভিহিত করে এর নিন্দা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল।

“দেশে গণতান্ত্রিক স্পেস না থাকা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থার কারণেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে,” বলেন তিনি।

বিদেশিদের নিরাপত্তা দেওয়া ‘সরকারের বড় কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম’ মন্তব্য করে এক্ষেত্রে সরকারকে আরও সর্তক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তাভেল্লা হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা ফখরুল।

দীর্ঘদিন পর মির্জা ফখরুল দলীয় কার্যালয়ে এলে নেতা-কর্মীরা ফুল দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানান। ভারপ্র্রাপ্ত মহাসচিব নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলিঙ্গন করেন এবং তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

পরে তিনি দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে নিজের চেম্বারে বৈঠকে বসেন। এ সময়ে অফিসের কিছু দাপ্তরিক কাজও করেন এই বিএনপি নেতা।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে মির্জা ফখরুল সর্বশেষ দলের নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসেছিলেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনের আহ্বানের মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে নাশকতার একাধিক মামলায় তাকে আসামি করা হয়।

মস্তিষ্কের ক্যারোটিড আর্টারিতে দুটি ব্লক ধরা পড়ায় গত ১৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের জামিন নিয়ে পরে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান ফখরুল।

গত ২১ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে পরদিনই ঈদ করতে ঠাকুরগাঁও চলে যান তিনি। সেখানে বৃদ্ধা মাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করে একদিন পর ঢাকায় ফেরেন।

কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিজের শারীরিক অবস্থা সর্ম্পকে ফখরুল বলেন, “আমি চিকিৎসার মধ্যেই আছি। আমাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে। ফলোআপের জন্য যেতে হবে।’’

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কার্যালয়ে অবস্থানের সময় দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।