বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে অন্যতম কারণ হিসেবে অন্তর্কোন্দলের বিষয়টি জানা গেলেও দলটির মুখপাত্রের দাবি, বিভিন্ন মামলায় নেতাদের কারাবন্দি করে এই প্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছে সরকার।
সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে সাড়ে সাত শতাধিক কমিটি নতুন করে গঠনের জন্য গত অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্র থেকে জেলা কমিটিকে চিঠি দিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।
এর মধ্যে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার আগে তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ জোরদার করার নির্দেশ দিয়ে যান।
বুধবার সময়সীমা পার হতে চললেও অনেক স্থানে তা করা যায়নি। তবে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানের দাবি, ৮০ শতাংশ কমিটি গঠন হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে দল গোছানোয় যুক্ত নেতারা বলছেন, নির্ধারিত সময় শেষ হলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। সেক্ষেত্রে যেসব জায়গায় কমিটি গঠনে দেরি হচ্ছে, সেখানে আরও সময় দেওয়া হতে পারে।
গত ৪ অগাস্ট দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে জেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে পৌর-উপজেলা-থানা-ইউনিয়ন কমিটিগুলো নতুনভাবে করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কমিটির নেতৃত্বে পরীক্ষিত, ত্যাগীদের আনতেও বলা হয়।
তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠনে যুক্ত শাহজাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সারাদেশে ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা ও পৌরসভায় কমিটি গঠনের কাজ এগিয়ে চলছে। আমাদের কাছে প্রতিবেদনও জমা পড়ছে। নির্ধারিত সময় পেরোনোর পরই এ বিষয়ে আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।”
কমিটি গঠনের সময় বাড়ানো হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আনুষ্ঠানিকভাবে সময় বৃদ্ধি করা হবে না। তবে যেসব কারণে বিভিন্ন জায়গায় কমিটি বিলম্ব হচ্ছে, তা যদি যুক্তিযুক্ত হয়, অবশ্যই তাদের সময় দেওয়া হবে।”
সারাদেশে বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার অধীনে সাড়ে সাত শতাধিক ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা ও পৌর কমিটি রয়েছে।
তৃণমূলে কমিটি গঠনের এই প্রক্রিয়া শেষে জেলা সম্মেলনের কাজে হাত দেবে বিএনপি।
ইতোমধ্যে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রাঙামাটি, নীলফামারী, সৈয়দপুরসহ আটটি জেলা সম্মেলন করার জন্য কেন্দ্রের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এসব জেলায় মাঠ পর্যায়ের কমিটি গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে।
কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও আগের মতো প্রকাশ্য তৎপরতা এবার দেখা যায়নি। তবে একে ‘কৌশল’ বলছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
পুনর্গঠন কার্যক্রম তদারকিতে থাকা এক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারাদেশে নীরবে কমিটি গঠন চলছে। প্রচারণা থাকলে সরকারের নজরদারি থাকত। কারণ সরকার চায় না বিএনপি সংগঠিত হোক।
“সে কারণে বিভিন্ন জেলায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যে নেতা-কর্মীরা আলোচনা করে কমিটির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করছে।”
তবে দলের চেয়ারপারসনের হুঁশিয়ারির পরও বিভিন্ন জায়গায় পাল্টা-পাল্টি কমিটি গঠনের কথাও স্বীকার করেছেন এই নেতা।
গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় খালেদা জিয়া তৃণমূল নেতাদের ‘পকেট কমিটি’ গঠনের ব্যাপারে হুঁশিয়ার করেন।
২০০৯ সালে ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির সর্বশেষ অর্থাৎ জাতীয় কাউন্সিল হয়। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটিও আর হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ মহাসচিবের দায়িত্বও চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে।