লন্ডনবাসী তারেকের হুকুমে দল চালানো যাবে না: জাফরুল্লাহ

বিএনপির একটি আলোচনা সভায় গিয়ে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে নানা পরামর্শ দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2015, 07:46 PM
Updated : 13 Sept 2015, 04:44 AM

জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা হয়ে খালেদা জিয়া যদি কারাগারে যান তাহলে দলের দায়িত্ব কে নেবেন সে বিষয়ে আলোচনা করতেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, “খালেদা জিয়া জেলে গেলে কি বিএনপি বন্ধ হয়ে যাবে? নিশ্চয় তা আপনারা চান না। জিয়াউর রহমান কবরে থেকে তা চান না।

“তার ছেলে তারেক রহমান, আমারও সে স্নেহের; লন্ডনে বসে ভালোই করছেন। তাই বলে ওইখানে বসে তার হুকুমে পার্টি চালানো যাবে না। তার সাথে আপনারা পরামর্শ করবেন।”

সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার ‘ষড়যন্ত্র’ পূর্ণ করে হলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন,“আমি স্পষ্টভাষায় সরকারকে বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ আমাদের মতো ৫০ অথবা ১০০ জন নেতাকে জেলে দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেন, তারপরও বলব, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।”

বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার অষ্টম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওই আলোচনা সভা হয়। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের জামিনে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন।

আলোচনা সভায় বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছাড়াও বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী নেতা এমাজউদ্দিন আহমেদসহ বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ছিলেন।

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে প্রশ্ন উদ্রেককারী মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহকে বিভিন্ন টেলিভিশন টকশোতে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোটের পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়।

আলোচনায় বিএনপি নেতাদের দলীয় প্রধানের স্তুতি বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই আলোচনা সভায় এসে দেখলাম, বক্তারা নেত্রীর স্তুতি করছেন। সুন্দরী মহিলার প্রশংসা কে না করে? তবে এটা বন্ধ করুন। স্তুতি করে আপনাদের কখনো উন্নতি আনবে না।”

উপস্থিত শ্রোতাদের সংখ্যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “অতীতে আমার আপনাদের মিটিংয়ে ঢুকতে কষ্ট হতো। আজ স্বাভাবিকভাবে ঢুকেছি। তার মানে হলো- ৫ কোটি লোক বিএনপি করলেও আজকে আমাদের বক্তৃতা শোনার লে্াক কমেছে। মহিলাদের সংখ্যা মাত্র ৫০ জন। তার মানেটা কী?”

ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের আত্মগোপনে থাকারও সমালোচনা করেন তিনি।

অতিথির আসনে বসা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, “আব্বাসের যখন ব্যাংকের পরিচালক পদ গেছে, তখন দল থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তার তো মামলায় ফাইট করার দরকার ছিল। জেলের ভয়ে ঘরে বসে থাকবেন, পুলিশকে পয়সা দিয়ে। পুলিশ জানে না আব্বাস কোন জায়গায় আছে? খুব ভালো করেই জানে। এভাবে থাকা যাবে না। এটা আব্বাসের জন্য মঙ্গলকর নয়, খালেদা জিয়া ও আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়।”

নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এতো বড় বিপদ আপনাদের। স্থায়ী কমিটির কয়টা মিটিং হয়েছে? ওই মিটিংয়ের প্রয়োজন আছে, ভবিষ্যতের পদক্ষেপ ঠিক করতে হবে।

“আমি খালেদা জিয়াকে বলেছি, দলের ভবিষ্যৎ ও রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করে এটাকে সময়োপযোগী করতে একটি কমিটি করে দেন। এমাজউদ্দীন সাহেবকে চেয়ারম্যান করে আমাদের রাখেন।”

জিয়াউর রহমানের আমলে তৈরি করা বিএনপির গঠনতন্ত্রে নতুন করে বিভিন্ন বিষয় সংযোজনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন জাফরুল্লাহ।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ট্রানজিট, সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, “ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ উড়ে গিয়ে পাখির ডানায় ভর করে শিলংয়ে উপস্থিত হননি। অবশ্যই ভারতীয় ‘র’ সরাসরি জড়িত আছে। বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় যেতে হবে, লুকোচুরি করে হবে না।”

বাংলাদেশকে প্রশাসনিকভাবে ১০টা প্রদেশে বিভক্ত করার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, “আজকে আমাদের এখানে যে বিভাগ তা নিয়ে গণতন্ত্র হবে না। জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষের গণতন্ত্র, যেখানে সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে। এটা কিভাবে হতে পারে? একটা পদক্ষেপ হতে পারে যদি বাংলাদেশকে ১০টা বিভাগ করে দেন। আজ যদি ১০টা প্রদেশ থাকত, চাই আর না চাই, তাহলে ৫/৬ টায় তো বিএনপি ক্ষমতায় থাকত।”

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “সংগঠন করুন। নইলে কারামুক্তি দিবস আত্মহত্যা দিবসে পরিণত হবে।”