ভোট নয়, এখন পড়াশোনা করবেন লতিফ সিদ্দিকী

সংসদ থেকে পদত্যাগ করে আপাতত ঘরে বসে পড়াশোনায় মন দিতে মনস্থ করেছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2015, 05:02 PM
Updated : 3 Sept 2015, 01:42 PM

নিজের আসনটি শূন্য ঘোষণার পর উপনির্বাচন হলে তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কোনো ইচ্ছাও নেই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এই প্রবীণ রাজনীতিকের।

হজ নিয়ে এক মন্তব্যের জন্য বিতর্কে পড়ে পদ খুইয়ে সংসদে আবেগময় এক বক্তৃতা দিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার একদিন পর বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় নিজের এখনকার পরিকল্পনা জানান লতিফ সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনে আর শুনানিরও দরকার নেই। আমি পদত্যাগ করেছি। এখন আর কোথাও যাব না। ঘরে বসে একটু পড়াশুনা করব।”

পদত্যাগপত্র গৃহীত হলে শূন্য হবে টাঙ্গাইল-৪ আসন, যে আসন থেকে একাধিবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী সিদ্দিকীদের বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী।

সেক্ষেত্রে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না- জানতে চাইলে স্পষ্টভাষী এই রাজনীতিক জোরকণ্ঠেই তা নাকচ করেন।

“আমি কোনোভাবেই স্বতন্ত্র নির্বাচন করব না। আওয়ামী লীগ আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি কাউকে বহিষ্কার করিনি। আমি আওয়ামী লীগার। রাজনৈতিক ব্যক্তি কখনও স্বতন্ত্র ব্যক্তি হতে পারে না।”

একদিন আগে সংসদে বক্তৃতায়ও তিনি বলেছিলেন, “আমি মুসলমান, আমি বাঙালি, আমি আওয়ামী লীগার- এ পরিচয় মুছে দেওয়ার মতো কোনো শক্তি পৃথিবীর কারও নেই- কারণ এ আমার চেতনা, আমার জীবনবেদ, প্রাণের রসদ, চলার সুনির্দিষ্ট পথ।”

আবদুল লতিফ সিদ্দিকী

ছাত্রলীগের মাধ্যমে আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া লতিফ সিদ্দিকী ১৯৬৪-৬৫ সালে করটিয়া সাদত কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ষাটের দশকে বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের দিনগুলোতে একাধিকবার কারাগারে যেতে হয় তাকে।

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতি) আসন থেকে পাঁচবার সংসদে যাওয়া লতিফ সিদ্দিকী গত মহাজোট সরকারের পাট ও বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর গত বছরের শুরুতে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে হজ নিয়ে করা মন্তব্যের পর সমালোচনার মধ্যে মন্ত্রিসভা ও দল থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে বাদ দেন শেখ হাসিনা।

এর পর দেশে ফিরে ধর্ম অবমাননার কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন ৭৭ বছর বয়সী এই রাজনীতিক। গত ২৯ জুন জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।

বেঁচে গেল ইসি

মন্ত্রিসভা ও দল থেকে বহিষ্কৃত লতিফ সিদ্দিকী নিজেই পদত্যাগপত্র স্পিকারের কাছে দেওয়ায় তার সংসদ সদস্য পদ নিয়ে জটিলতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবসান হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনাররা।

লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কারের পর তার সংসদ সদস্যপদ থাকা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে তার নিষ্পত্তির ভার চাপে ইসির উপর। লতিফ সিদ্দিকী ও তার দল আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিকে শুনানিতেও ডাকে তারা।

৬ সেপ্টেম্বর লতিফ সিদ্দিকী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের শুনানির কথা রয়েছে। তার আগেই পদত্যাগ করলেন লতিফ সিদ্দিকী।

ইসিতে শুনানির পর লতিফ সিদ্দিকী

নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনি যে পদত্যাগ করবেন, তা কেউই জানত না।

“স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ায় আমাদের জন্য ভালোই হয়েছে। এখন আর শুনানিরও দরকার পড়বে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ বিতর্কের নিষ্পত্তি হল। এখন আর ইসির করার কিছুই নেই।”

সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করায় লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়টি ‘নিষ্পত্তি হয়েছে, আর ইসির করণীয় নেই’ এ ধরনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে অনুসরণে দল থেকে বহিষ্কারে সংসদ সদস্য পদ বাতিল বা সংসদ সদস্য হিসেবে থাকবার অযোগ্যতার বিষয়টি আর আমলে নেওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না বলে মনে করেন আবদুল মোবারক।

দলের বহিষ্কার বা সংসদ সদস্য পদ থাকার অযোগ্যতা বিষয়টি তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে আগেই বলে আসছিলেন লতিফ সিদ্দিকী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকেও বলেন, “আমার বিষয়ে কারও সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার পড়বে না। আমি নিজেই তো সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।”

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর জটিলতা এড়াতেই এই পদক্ষেপ কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি নজির-বেনজির বুঝি না। এ নিয়ে আর কিছুর দরকার নাই।”

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বহস্তে লিখিত পদত্যাগপত্র স্পিকারের কাছে গৃহীত হলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হবে। পদত্যাগপত্রটি বিধিসম্মত হলে সংসদে কার্যপ্রণালি বিধির ১৭৮ (৩) অনুযায়ী বিষয়টি অধিবেশনেই সংসদকে জানাবেন স্পিকার।

আসন শূন্য ঘোষণা সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের পর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হলে উপ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।