সরকারের অপকর্ম ঢাকতেই তারেকের বিরুদ্ধে চার্জশিট: বিএনপি

সরকারের সীমাহীন অপকর্ম জনগণের দৃষ্টি থেকে আড়াল করতেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে ‘সাজানো’ অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2015, 01:32 PM
Updated : 27 August 2015, 01:32 PM

বৃহস্পতিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কাযার্লয়ে দলের সবোর্চ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়।

গাজীপুরের একটি আদালতের দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারপারসন তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমার পরদিন বুধবার দলের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপনও সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানান।

স্থায়ী কমিটির পক্ষে নজরুল ইসলাম খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, “আমরা মনে করি, জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরানোর অপচেষ্টা হিসেবে জনাব তারেক রহমানকে কাল্পনিক ও বানোয়াট অভিযোগে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের এবং এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

“সাজানো এই অভিযোগকে ভাদ্র মাসের আষাঢ়ের গল্প ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। দেশবাসী এটা বিশ্বাস করে না। আমরা এহেন কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

অবিলম্বে অভিযোগপত্রটি প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তিনি।

গত ২১ জানুয়ারি হরতালের মধ্যে গাজীপুরে একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় করা মামলায় মঙ্গলবার তারেক রহমানসহ ৩২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

তারেকের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সহকারী লুৎফর রহমান বাদল ও গাজীপুরের বরখাস্ত মেয়র এমএ মান্নানের ছেলে মঞ্জুরুল আহসান রনিকেও আসামি করা হয়েছে।

নজরুল ইসলাম বলেন,  গত ২১ জানুয়ারি সংঘটিত ঘটনার উপস্থিত সাক্ষীদের বর্ণনা অনুযায়ী ১৮ জনকে আসামি করে যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন (এফআইআর) দাখিল করা হয়, তাতে তারেক রহমানের নাম ছিল না। অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনের মধ্যে তার নাম যুক্ত করা হয়েছে।

“একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদের নেতা, মহান স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র কি করে অজ্ঞাত আসামিদের একজন হতে পারেন?”

অভিযোগপত্রে তারেক রহমানের যে ব্যক্তিগত সহকারীর নাম বলা হয়েছে, সে নামে আদৌ কোনো সহকারী তারেকের নেই বলে দাবি করেন এই বিএনপি নেতা।

“গাজীপুরের মেয়রপুত্র মঞ্জুরুল আহসান রনিও বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতা নন। কথিত আসামিরাও বিএনপি অথবা অঙ্গ সংগঠনের পরিচিত নেতাকর্মী নন।

“যে স্থানে বাস পোড়ানোর ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তা ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে গ্রামাঞ্চলে। সেখানে কোনও শিল্পাঞ্চলও নেই যে সেখানে বাস পুড়িয়ে দেশের রপ্তানি-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়।

“কাজেই অভিযোগপত্রটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও হাস্যকর।”

গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ

সংবাদ সম্মেলন নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা কেউ তারেক রহমানের বক্তব্য ছাপাতে কিংবা প্রচার করতে পারেন না। অথচ সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে শাসক দল ও জোটের মন্ত্রী-নেতারা তার বিরুদ্ধে অনবরত কুৎসা রটাচ্ছে, মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে, যা পত্র-পত্রিকা ও ইলেক্টনিক মিডিয়াতে নিয়মিত ছাপা ও প্রচারিত হচ্ছে।

“অথচ এসবের জবাব দেওয়া মৌলিক মানবাধিকার তারেক রহমানের নেই। দেশের একজন সন্মান্বিত নাগরিককে এমন একতরফা নিন্দা ও অপবাদের অসহায় শিকার হওয়ার দৃষ্টান্ত সভ্য বিশ্বের কোথাও আছে কিনা জানা নেই।

তাই তারেক রহমানকে আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করতে অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনও বক্তব্য প্রচার কিংবা প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান তিনি।

“এটা নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্ন। আশা করি, আপনারা এ ব্যাপারে আপস করবেন না।”

এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, “দল পুনর্গঠনে বাধা সৃষ্টি করতেই সরকার দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করছে, মামলা দিচ্ছে। সর্বশেষ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগপত্র দায়ের করা হলো। এটা দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অংশ বলেও আমরা মনে করি।”

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আসম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর নাসির, আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন উপস্থিত ছিলেন।