‘গণঅভ্যুত্থানে’ সরকারের পতন চান বিএনপির হাফিজ

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এখন আর ভোটের মাধ্যমে নয়, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন চান তারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2015, 06:20 PM
Updated : 26 August 2015, 06:22 PM

দল পুনর্গঠনের পর ফের সরকার পতনের জন্য আন্দোলনে নামারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা এখন আর ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন চাই না। আমরা এখন চাই গণঅভ্যুত্থানে এই ধরনের স্বৈরাচারী সরকারের পতন।”’

বিএনপি সমর্থক মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বেগম জিয়ার ডাকে দল পুনর্গঠনের পর আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আবার রাজপথে নামব। আমি আশা করব, বয়সে বেশি হলেও মুক্তিযোদ্ধা দল ওই আন্দোলনে গণতন্ত্রের পতাকা বহন করবে।”

গত ২৪ আগস্ট ছিল মুক্তিযোদ্ধা দলের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

বর্তমান দেশে গণতন্ত্র নেই দাবি করে বিএনপি নেতা হাফিজ বলেন, “দেশে নির্বাচিত সরকার ও সংসদ নেই। যে গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, সেই গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ নির্বাসনে পাঠিয়েছে। তাদের কোনো লজ্জা-শরম নেই।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে সরকার ‘রেকর্ড’ গড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘জিয়া দায়ী নয়’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না বলে দাবি করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ বলে ১৫ অগাস্টের ঘটনার জন্য জেনারেল জিয়া দায়ী। এটা মিথ্যা কথা। ঘটনার দিন সকালে আমি ও আমার কমান্ডিং অফিসার জিয়াউর রহমানের বাসায় গিয়েছিলাম। তিনি সেভ করছিলেন। পায়জমা পরা, সাদা গেঞ্জি, দুই গালে সাবান লাগানো। আমাদের তিনি বললেন কী হয়েছে। আমরা তাকে ঘটনা জানালাম।

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ফাইল ছবি)

“ওই দিনই বিকালে তিন বাহিনীর প্রধান খোন্দকার মুশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলেন। জিয়াউর রহমান তো সেখানে যাননি। তিনি তার ‘সোলজার কোয়ালিটি’ নিয়ে নিজের অফিসে বসেছিলেন। সব সময় নিজের সৈনিকসুলভ সততা ও নিজের দায়িত্ব তিনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে রেখেছেন। তিনি কখনও তার ইউনিফর্মের সম্মান নষ্ট করেননি।”

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই বঙ্গবন্ধু খুন হয়েছিলেন দাবি করে মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ বলেন, “শেখ সাহেবকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগাররা। তিনি নিহত হয়েছেন ওই দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। তার হত্যার পর আওয়ামী লীগের পুরো মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে। আমি সেই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলাম। ১৫ অগাস্ট বিকাল বেলা বঙ্গভবনে যখন শপথ গ্রহণ করে খালি একজন শেখ মুজিবুর রহমান নেই, বাকি সবাই আছে। ওই সময়ে ৮৩ দিন আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় ছিল।

“অথচ তাদের যত তীর, যত গালি সব শহীদ জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে। যত রাগ বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। যত ক্ষোভ বিএনপির বিরুদ্ধে।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট একদল সেনা সদস্যের হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু খুন হওয়ার পর নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন তার সরকারের মন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমেদ।

এ প্রসঙ্গ টেনে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “খোন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি থেকে চলে যাওয়ার পরও কত বছর রাজধানীর আগামসী লেনের বাসায় ছিলেন। সেখানে কোনো পুলিশ পাহারাও ছিল না। আওয়ামী লীগাররা ওই সময়ে তার বাসায় একটা ইট পর্যন্ত মারতে যায়নি।”

আলোচনায় তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের দাবি জানান বিএনপি নেতা হাফিজ।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সভায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাবেক সাংসদ শাহ আবু জাফর, নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান, মহিলা দলের শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক এসএম শফিউজ্জামান খোকন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।