অবস্থান বদলাইনি: খালেদা

শেখ হাসিনার অধীনে নয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি তাতে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2015, 06:03 PM
Updated : 1 August 2015, 06:34 PM

যে কোনো নামে একটি ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি জানানোর এক সপ্তাহের ব্যবধানে শনিবার তিনি বলেছেন, তার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

রাতে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে রাজশাহী জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত আইনজীবী ছাড়াও অন্যান্য আইনজীবীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীদের অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম- আমরা নির্বাচন চাই, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এটা পরিষ্কার। এটাকে কোনো কোনো পত্রিকা নানাভাবে অপব্যাখ্যা দিয়েছে। আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।”

শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে না মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি, হাসিনা মার্কা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে জনগণ ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে না।

“তাই আজো বলছি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, সেই নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নেবে।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিরোধিতা করে আসা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি তা ঠেকানোর আন্দোলনে নামে।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি জোটের ওই আন্দোলন এবং নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে তাদের তিন মাসের অবরোধে নাশকতায় অন্তত দুইশ মানুষের প্রাণহানি হয়।

৫ জানুয়ারির ভোট বর্জন করে আসা বিএনপি বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এলেও সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সরকারের মেয়াদ শেষে ২০১৯ সালে বর্তমান সরকারের অধীনে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হবে।

আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আগামীতে নিবার্চনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে ‘নতুনধারার’ রাজনীতির সূচনা করে দেশ পরিচালনা করার ঘোষণা দেন বিএনপি নেত্রী।

খালেদা বলেন, “আমরা বলতে চাই, আমরা রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে চাই। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। আমাদের প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি ভুলে যেতে হবে। শহীদ জিয়ার বিএনপি এই ধরনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।

“আমরা চাই উন্নয়নের রাজনীতি, জনগণের কল্যাণ ও সুশাসনের রাজনীতি। সেজন্য আগামী দিনে আমাদের সুযোগ আসলে সেই ধারার রাজনীতির সূচনা করবো।”

সভার শুরুতে জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি নাজমুস সাদাত, সাধারণ সম্পাদক জমসেদ আলী, সহসভাপতি মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে আইনজীবীরা খালেদা জিয়াকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। নিবার্চনে জাতীয়তাবাদী প্যানেল ২১ জনের মধ্যে ১৭ জন বিজয়ী হন।

বিএনপি প্রধান দেশের জনপ্রশাসন, পুলিশ ও বিভাগ দলীয়করণের জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “আওয়ামী লীগের কোনো জনসমর্থন নেই। তারা ভর করে আছে পুলিশের উপর ও কিছু প্রশাসনের উপর। বিচার বিভাগের উপরও তারা ভর করেছে। এই সরকার তাদেরকে (প্রশাসন ও পুলিশ) ভয় দেখায়। বলে যদি আওয়ামী লীগ না থাকে তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তোমাদের সবাইকে চাকরিচ্যুত করবে, তোমাদের সবাইকে জেল-জুলুম দিয়ে নানারকম হয়রানি করবে।”

এ ব্যাপারে খালেদা জিয়া বলেন, “আমি স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই- না, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে অন্যায়ভাবে কাউকে কিছুই করা হবে না। কেন চাকুরিচ্যুত করা হবে? তারা যা কিছু করেছে, আওয়ামী লীগের চাপেই করেছে, আমরা জানি, আমরা বুঝি। তাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে।”

বক্তব্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “নির্বাচন কমিশন সংবিধানবিরোধী কাজ করছে। তারা নাবালকেকে ভোটার করছে। তাদের লজ্জা থাকলে এখনই পদত্যাগ করা উচিত।”

ক্ষমতাসীন জোটের দলগুলোকে ‘পরগাছা’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের কিছু পরগাছা জুটেছে। এরা অতীতে বার বার নির্বাচন করেছে, তারা কোনবারই জয়ী হতে পারেনি। জামানতও থাকেনি। এই পরগাছার কথা শুনে আওয়ামী লীগ নিজেকে ধ্বংস করছে।”

গত তিন মাসের আন্দোলনের যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের জন্য ক্ষমতাসীন দল ও তাদের জোটকে দায়ী করে খালেদা বলেন, “কথায় কথায় তারা বলে বিএনপি নাকি পেট্রোল বোমা দেয়। আমরা এই রাজনীতি করি না। আমরা দেখাবো এই পেট্রোল বোমা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ দেয়। তাদের বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়েছে ওই পরগাছারা। পরগাছারাই ওইসব কাজ করেছে।”

এ সময় তিনি স্বাধীনতার পর জাসদের কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন।

খালেদা জিয়া বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, বিএনপির তখন জন্ম হয়নি। এই পরগাছাগুলো কত মানুষ হত্যা করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বাড়িতে আক্রমণ করেছে। তখন ইচ্ছামতো তারা শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে বাজে কথা বলেছে, অসম্মান করেছে।”

“এখন যেহেতু নেতা নেই, পারলে জুতাটাকে চুমো দিতে থাকবে। ক্ষমতায় থাকার জন্য জুতাকে বার বার সালাম করবে। পরগাছার জন্যটা আজ শেষ হতে বসেছে।”

মাগুরায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে মা ও মেয়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধ হওয়ায় ঘটনায় দোষীরা এখনো ধরা না পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আজ আইনের শাসন নেই। বিচার বিভাগ দলীয়করণ করা হয়েছে। সেজন্য মানুষ সুবিচার পায় না। আদালতের কোনো যুক্তিতর্কের ও সত্যের কোনো মূল্য নেই। আওয়ামী হলে যত খুন, চুরি-ডাকাতি যাই করুক, সব খালাস। আর বিএনপি না করলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হুলিয়া ও জেল-জুলুম।”

দল পুনর্গঠনের কথা উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। ঢাকা থেকে আর কোনো কমিটি দেওয়া হবে না। আপনাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। তাই আমার লোক, আমার ভাই এটা দেখে কমিটি করাবেন না।”

“সাচ্চা, সৎ ও যোগ্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে সংগঠনের নেতা নির্বাচিত করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দায়িত্বে আনতে হবে। বয়স্কদের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য করবেন।”

এ সময় আগামী ২৬ অগাস্ট অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলকে ‘বিভেদ ভুলে’ ঐক্যবদ্ধভাবে বিজয়ী করার জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি প্রধান।

অন্যদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, বদরুদ্দোজা বাদল, বোরহান উদ্দিন, মহসিন মিয়া, রাজশাহী জোনে মো. ইসহাক প্রমুখ প্রার্থীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভায় দলের নেতাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, আমীনুল হক, হারুনুর রশীদ, সদ্য অপসারিত রাজশাহীর সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।