বিএনপির প্রতিক্রিয়া মিলবে সংবাদ সম্মেলনে

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় বহালের রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে তার দলের পক্ষ থেকে বিকেলে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 July 2015, 09:59 AM
Updated : 29 July 2015, 10:00 AM

বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বুধবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিকাল ৫টায় নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ব্রিফ করব।”

ওই সময় পর্যন্ত রায়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কেউ। সাকার জেলা চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারাও মুখ খোলেননি।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার সাকা চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধ মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের চার অভিযোগে বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরীর সর্বোচ্চ সাজার আদেশ আসে। 

এই রায় ঘিরে আগের রাত থেকেই ঢাকা, চট্টগ্রামসহ স্পর্শকাতর বিভিন্ন এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। বুধবার সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়; প্রস্তুত রাখা হয় রায়ট কার ও সাদা একটি মাইক্রোবাস।

তবে সকাল থেকে কয়েকজন নেতা ও কর্মচারী ছাড়া তেমন কাউকে বিএনপি কাযার্লয়ে দেখা যায়নি। রায়ের পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে ৮ জনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের মৃত্যুতে শোক জানাতে বেলা ১টার দিকে গুলশানে ভারতীয় হাই কমিশনে যান বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল মঈন খান। এ সময় সাকা চৌধুরীর রায় নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা।

মঈন খানের কাছে একজন জানতে চান, বিএনপি সব সময় বলে ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’। এক্ষেত্রে ব্যক্তির অপরাধের দায় দল নেবে কিনা।

এর কোনো জবাব না দিয়ে সাবেক মন্ত্রী মঈন খান বলেন,  “আজ এখানে শোক জানাতে এসেছি। এ বিষয়ে কথা বলব না। আমরা আজ শোকের মধ্যেই থাকি। এ বিষয়ে অন্য সময়ে কথা হবে।”

এর আগে জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের পরও ‘নিশ্চুপ’ ছিল বিএনপি। আর ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায়ের এক দিন পর তার দলের প্রতিক্রিয়া জানা গিয়েছিল।

সারাদেশে বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়ে ২ অক্টোবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সালাউদ্দিন কাদেরের রায়ে তারা ‘বিস্মিত’ ।

“এই ট্রাইব্যুনাল গঠন ও তার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা বির্তক সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি মনে করে, মানবতাবিরোধী বিচারের নামে সরকার তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।”

২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিলে দলের সবোর্চ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৩ থেকে বাড়িয়ে ১৯ করা হলে মঈন খানের সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও স্থান পান। এর আগে দলের তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন না তিনি।

বাবা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর মতোই সাকা চৌধুরীর রাজনীতির শুরু মুসলিম লীগ থেকে। পরে জাতীয় পার্টি ও এনডিপি হয়ে তিনি বিএনপিতে আসেন। চট্টগ্রাম থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য হন তিনি।

সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের শাসনামলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, গৃহায়ণ ওগণপূর্ত এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন সা কা চৌধুরী। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বও তিনি পালন করেন।

আপিলের রায়ের পর চট্টগ্রাম বিএনপির পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনকে ফোন করে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন। আর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এই সাংগঠনিক জেলার অধীনেই রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি উপজেলার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এসব এলাকা থেকেই সংসদে গিয়েছিলেন সাকা চৌধুরী।

উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও রাউজানের সাবেক পৌর মেয়র আবদুল্লাহ আল হাছান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ব্যক্তি সালাউদ্দিন কাদের এক বিষয়, আবার দলের বিষয় আরেক। কেন্দ্র থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।”

তবে ফটিকছড়ি-রাউজানে স্থানীয়ভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে আভাস দেন চট্টগ্রামের এই বিএনপি নেতা।