আসাম বাদ দিয়ে সীমান্ত চুক্তির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী গগৈ

বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি থেকে আসামকে বাদ না দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ জানিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ।

আসাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2015, 03:43 PM
Updated : 3 May 2015, 03:43 PM

আসাম বিজেপির পক্ষ থেকে স্থল সীমান্ত চুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতার মুখে চুক্তি থেকে আসামের ছিটমহলগুলো বাদ দেওয়ার বিষয়টি মোদী বিবেচনা করছেন বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানান আসামের মুখ্যমন্ত্রী।

নরেন্দ্র মোদীর কাছে লেখা চিঠিতে তরুণ গগৈ বলেন, “ভারত সরকার আসাম রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া সংসদে অনুসমর্থিত প্রটোকলে আসাম অংশ সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করবে না বলে খবরে আমি অবাক হয়েছি।”

২০১১ সাল থেকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী গগৈ চার বছর আগে ঢাকায় এই চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরসঙ্গী ছিলেন। এই চুক্তি সমর্থনও দিয়েছিলেন তিনি।

মোদীর উদ্দেশ্যে চিঠিতে গগৈ বলেন, “এই পশ্চাদপসরণের পেছনের কারণ সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে রয়েছি। সংসদে অনুসমর্থনের প্রক্রিয়া চলাকালে আসাম সম্পর্কিত অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার মাধ্যমে কীভাবে আসামের জনগণের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে। এই সিদ্ধান্ত আপনার সমর্থনপুষ্ট সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার মূলনীতিরও বিপক্ষে যাবে।”

গগৈ বলেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি প্রটোকলের ধারাগুলো ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ১৯৭৪ সালে সম্পাদিত চুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ।

“এই প্রটোকলের ফলে, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের আসাম অংশে করিমগঞ্জ জেলার লাঠটিলা-দুমাবাড়ি সেক্টর, ধুবরি জেলার কলাবারি (বড়ইবাড়ি) এলাকা এবং করিমগঞ্জ জেলার পাল্লাথাল এলাকার সীমানা রেখা ‘রেডক্লিফ লাইন’ নতুন করে টানা হবে।”

গগৈ বলেন, “এই সীমানা রেখা আবার টানার ফলে লাঠিটিলা এলাকার প্রায় ৭১৪ একর জমি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের (আসাম) অংশ হয়ে যাবে। একইভাবে পাল্লাথাল  এলাকায় ৭৪ দশমিক ৫৫ একর জমিও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত হবে। এই ২৬৮ দশমিক ৪ একর জমি এর মধ্যেই বাংলাদেশের প্রতিকূল দখলে রয়েছে। আর তাই ভারত (আসাম) রেডক্লিফ লাইনের হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৪৫ দশমিক ৬ একর জমি পাবে।”

আসামে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দেওয়া ২০১৪ সালের নভেম্বরে  একটি বিবৃতির কথা মনে করিয়ে দেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী, যেখানে তিনি বলেছেন ১৯৭৪ সালের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তির  প্রটোকল বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘ মেয়াদে আসামেরই লাভ হবে।

ফাইল ছবি

গগৈ বলেন, “আসাম অংশের অনুচ্ছেদসহ এই চুক্তি অনুসমর্থিত হলে আসামে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিরোধের অবসান হবে শুধু তাই নয়, লাঠিটিলা-দুমাবাড়িতে অচিহ্নিত সীমানা চিহ্নিতকরণেও তা সহায়তা করবে।”

তিনি বলেন, পরিষ্কারভাব সীমানা চিহ্নিত হলে তাতে সীমানায় কাঁটাতার দেওয়াও সম্ভব হবে।

“এর ফলে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও উগ্র সন্ত্রাসবাদীদের চলাচলও ঠেকানো যাবে।”

এদিকে আসাম রাজ্যকে বাদ দিয়ে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশকেও কিছু জানায়নি ভারত।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদেরকে জানানো হয়নি।”

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আগামী রাজ্য নির্বাচনের বিষয়টি মাথার রেখে আসামকে বাদ দিয়ে ১৯৭৪ সালের চুক্তি ও ২০১১ সালের প্রটোকল বাস্তবায়নের কথা চিন্তা করছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।

চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশকে যা দেওয়া হবে তার তুলনায় রাজ্য কম পাবে বলে আসামের কোনো এলাকা ছেড়ে দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিজেপির রাজ্য শাখা।

স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দুটি চা বাগানসহ বাংলাদেশের কাছ থেকে ২৩১ একর জমি পাবে আসাম। অন্য দিকে নিজ নাগরিকদের আবাস ২৬৮ একর জমি পাবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের জমি ও ছিটমহল থাকা সব রাজ্যকে নিয়েই বরাবর স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থন চেয়ে আসছে সরকার।

এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দুদেশের মধ্যে ছিটমহল, বেদখল জমি ও অচিহ্নিত সীমানা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।

স্থল সীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের মোট সাত হাজার ১১০ একর আয়তনের ৫১টি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের মোট ১৭ হাজার ১৬০ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল বিনিময়ের কথা রয়েছে।

বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার এবং ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার।

বিজেপি ও অসম গণপরিষদ শুরু থেকে এই বিলের বিরোধিতা করে বলে আসছিল, ছিটমহল বিনিময় হলে যে পরিমাণ জমি হাতবদল হবে, তাতে ভারত প্রায় ৭ হাজার একর বেশি জমি হারাবে।