‘অবৈধ’ বাংলাদেশি: আসাম সরকারের প্রতি আদালতের ক্ষোভ

বাংলাদেশিদের ‘অবৈধ’ অভিবাসন নিয়ে আসাম রাজ্য সরকার যথাযথ ভূমিকা রাখছে না বলে মনে করছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

নয়াদিল্লি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2015, 10:59 AM
Updated : 1 April 2015, 10:59 AM

অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনাও করেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।

বিচারপতি রঞ্জন গগই ও বিচারপতি আর এফ নারিমানের সমন্বয়ে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি শুনানিতে ‘অবৈধ’ বাঙালি অভিবাসীদের চিহ্নিতের কাজে রাজ্য সরকারের শিথিলতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে। 

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে রাজ্য সরকারের দেওয়া প্রতিবেদন ‘সন্তোষজনক’ নয় বলে আদালত অভিমত দিয়েছে।

এ বিষয়ে নতুন করে প্রতিবেদন দিতে ১০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে আসামজুড়ে ৫০০ পুলিশি তল্লাশি চৌকি স্থাপন করতে গত বছর ১৭ ডিসেম্বর নির্দেশনা দেয় আদালত। ওই নির্দেশনা পালন না হওয়ায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুই বিচারপতি।

আসাম সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে তাতে তিন মাসেও আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সরকারের ব্যর্থতার উঠে এসেছে বলে তারা বলেছেন।   

আদালত বলে, “বিষয়টিকে আপনারা যথাযথ গুরুত্ব দেননি। কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে আপনারা থেমে ছিলেন। আপনাদের জবাব খুবই অসন্তোষজনক।”

বিচারপতি গগই, যিনি নিজেও আসামের অধিবাসী, এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে তিরষ্কার করে বলেন, “আপনারা কি রাস্তার কাউকে ধরে এনে সর্বোচ্চ আদালতে এফিডেবিট দিয়েছেন? প্রকৃত বাস্তবতা সম্পর্কে তিনি কী জানেন? আমরা কি তাকে ডেকে তার জ্ঞানের পরীক্ষা নেব?”

এমনকি আসাম-বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দেওয়া এবং অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে পদক্ষেপের বিষয়ে কেন্দ্র থেকেও অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে সরকারি আইন কর্মকর্তা কিষাণ কাউলকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।  

রাজ্যের বৈধ অভিবাসীদের সম্পর্কে তথ্য দিতে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন অফিসের সমন্বয়ককে পরবর্তী শুনানির দিনে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতিরা।

সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের এ ধরনের নির্দেশনা আসামের বিভিন্ন আঞ্চলিক গ্রুপ এবং কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপিকে অভিবাসী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে উদ্যোগী হতে উৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রাজ্যের শাসক দল কংগ্রেস সবসময়ই ভোটের রাজনীতির জন্য বাংলাদেশ থেকে ‘অবৈধ’ অভিবাসনকে উৎসাহ দেয় বলে সমালোচনা করে আসছে বিজেপি এবং আসামের বিভিন্ন সংগঠন।

অল-আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নসহ (এএএসইউ) বেশ কিছু সংগঠন ১৯৫১ সালকে ভিত্তিবছর ধরে সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে বৈধ ও অবৈধ নাগরিক চিহ্নিত করার দাবি তুলেছে।  

কথিত ‘অবৈধ’ অভিবাসী বিতাড়নের দাবিতে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে নেমেছিল এএএসইউ।

ওই সময় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন বাঙালি।