ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং ‘বরখাস্ত’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নয়া দিল্লি ছাড়ার এক দিনের মাথায় ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে দেশটির সরকার, যদিও মেয়াদ পূর্তির সাত মাস বাকি ছিল তার।

গৌতম দেবরায়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2015, 04:31 AM
Updated : 29 Jan 2015, 10:15 AM

এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে আক্ষরিক অর্থে শীর্ষ পর্যায় থেকে ঝাঁকুনি খেল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের আরও কয়েকটি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার পদে পরিবর্তনের আভাসও রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পর বুধবার রাতে পদত্যাগ করেন সুজাতা সিং।

রাতেই সরকারি এক ঘোষণায় বলা হয়, “পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের মেয়াদ কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হচ্ছে।”

সুজাতার জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রাষ্ট্রদূত সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করকে নতুন পররাষ্ট্র সচিব করা হয়েছে।

গত বছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ঢাকা সফরে এসে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন সুজাতা সিং

২৮ বছর আগে ১৯৮৭ সালে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এপি ভেঙ্কটেশবরণকে অপসারণের পর প্রথম কোনো পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে সুজাতাকে এভাবে সরানো হল।

সুজাতা সিংয়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অসন্তোষের কথা কয়েক মাস ধরেই প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। পররাষ্ট্র সচিব পদে পরিবর্তনের কথা উঠলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাকে রাখার পক্ষে অবস্থান জানিয়ে আসছিলেন বলে মনে করা হয়।

অবশেষে ওবামার সফরের পর তাকে সরানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।

নতুন পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর যুক্তরাষ্ট্রের আগে চীন ও সিঙ্গাপুরে রাষ্ট্রদূত ছিলেন।

ভারতের ‘স্ট্রাটেজিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত কে সুব্রামানিয়ামের ছেলে জয়শঙ্কর। ২০১৩-১৪ সালে চীনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনে তার ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চীনে রাষ্ট্রদূত থাকাকালে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে দেশটি থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসার জন্যও তাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও তার ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়।

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে চীন সফরে গিয়ে দেশটির অনেক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় মোদীর। ওই সফর ফলপ্রসূ হওয়ায় সে সময়কার রাষ্ট্রদূত জয়শঙ্করের প্রতি খুব সন্তুষ্ট হয়েছিলেন তিনি।

রঞ্জন মাথাই অবসরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়েরও পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিলেন জয়শঙ্কর। মনমোহনের জাতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাও তাকে চাইছিলেন।

তবে সুজাতা সিং তার জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তাছাড়া বাবা সাবেক গোয়েন্দা ব্যুরো প্রধান টি ভি রাজেশ্বরের কারণে তিনি গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেও অনেকে বলে থাকেন। কয়েকটি রাজ্যের গভর্নরের দায়িত্বও পালন করেন রাজেশ্বর।

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে গত রোববার নয়া দিল্লি আসেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিন দিনের সফর শেষে মঙ্গলবার সৌদি আরবের উদ্দেশে ভারত ছাড়েন তিনি।

সুজাতা সিং পররাষ্ট্র সচিব থাকাকালেই যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে গ্রেপ্তার নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়া দিল্লির সম্পর্কে ব্যাপক টানাপোড়েন হয়।

সহকর্মীর ভিসা আবেদনে মজুরি নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং তাকে চুক্তি অনুযায়ী পারিশ্রমিক না দিয়ে বেশি কাজ করানোর অভিযোগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কে ভারতীয় কনস্যুলেটের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তাকে প্রকাশ্যে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া, বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশি এবং মাদক কারবারি ও যৌনকর্মীদের সঙ্গে এক সেলে রাখার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক।

ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় ভারত। নয়া দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কূটনীতিকদের সুযোগ সুবিধা কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দেবযানীকে অপমান করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষমা চাইতেও বলা হয়।

প্রায় একমাস কূটনৈতিক টানাপোড়েনের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরেন দেবযানী, যুক্তরাষ্ট্রে মামলা থেকেও রেহাই পান তিনি।