নিহত শিশুদের জন্য ফুল, ক্রিসমাসের উপহার, আর খেলনায় বাড়িটির আশপাশ ভরিয়ে তুলেছেন তারা।
অস্ট্রেলিয়ার উত্তর কুইন্সল্যান্ডের কেয়ার্নসে আট শিশু খুনের পরের চিত্র এটি।
শুক্রবার সকালে লাশগুলো উদ্ধারের পর মারসেনা ওয়ারিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নিহত শিশুদের মধ্যে সাতজনই তার সন্তান। অন্যজন তার এক দত্তক ভাইয়ের মেয়ে।
ওয়ারিয়ার এই নয় সন্তানের বাবা পাঁচ জন। সাত সন্তানকে তিনিই খুন করেছেন! যে আট শিশু তার হাতে নিহত হয়েছে তাদের চারজন মেয়ে, যাদের বয়স ২, ১১, ১২ ও ১৪ বছর। নিহত বাকি চারজন ছেলে। তাদের বয়স ৫, ৬, ৮ ও ৯ বছর।
ওয়ারিয়ার আরও দুটি ছেলেমেয়ে আছে, যারা ওই রাতে সেখানে না থাকায় বেঁচে গেছে। এদের মধ্যে ২০ বছর বয়সী ছেলেটি শুক্রবার সকালে বাসায় এসে ওই ঘটনা দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে সেখানে আহত ওয়ারিয়ার পাশাপাশি আট শিশুর লাশ দেখতে পায়।
পুলিশের ওই সদস্যদের এখন মানসিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ‘দ্য সিঙ্গেল লারজেস্ট ফ্যামিলি ট্রাজেডি ইন অস্ট্রেলিয়ান হিস্ট্রি’ বলে ঘটনাটির বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে।
এই ঘটনাটি কেন ঘটল? পুলিশ এখনও সে বিষয়ে মুখ খুলছে না। পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। প্রতিবেশীরা তাকে ব্যক্তিত্বসম্পন্না নারী হিসাবেই জানতেন।
খুব গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলতেন ওয়ারিয়া। ‘সিঙ্গেল মাম’ হিসাবে সরকারি হাউজিং থেকে পাওয়া বাড়িতে থাকতেন। ‘সিঙ্গেল মাম’ যাতে সন্তানদের নিয়ে কোনো নিরাপত্তা সমস্যায় না ভোগেন সেজন্য এদেশের সরকার নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক সাতটি শিশু ও নিজের মিলিয়ে আট জনের জন্যে সরকারি ভাতা পেতেন ওয়ারিয়া, যার পরিমাণ সপ্তাহে ১২০০ ডলারের কম নয়।
তার ছেলে-মেয়েগুলো খুব হাসি-খুশি, লক্ষ্মী স্বভাবের ছিল বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার আইল্যান্ডারদের বেশিরভাগ খ্রিস্টান। এদের চার্চও আলাদা। এদের প্রায় সবাই মদ্যপায়ী। গড়নও মোটা ধরনের।
এক প্রতিবেশী বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাত খুব খারাপ গেছে ওয়ারিয়ার। কার সঙ্গে যেন প্রচণ্ড ঝগড়া করছিলেন তিনি। ভোর ৬টার দিকে তাকে তিনি দেখতে গেলে তাকে শান্তই দেখেন। সম্ভবত ওই প্রতিবেশী চলে যাওয়ার পর শিশুদের 'হত্যার' প্রক্রিয়া শুরু করেন ওয়ারিয়া। আটটা বাচ্চা, এদের মারতেও তো তার সময় লেগেছে!
সকালে বাসায় ফিরে ওই অবস্থা দেখে তার ২০ বছরের ছেলেটি মামাকে ফোন করে বলে, “কেউ বেঁচে নেই।”
এই মামার ১৪ বছরের মেয়েটি এই বাড়িতে বেড়াতে এসে খুন হয়েছে।
শনিবার মেয়েটির জন্মদিন ছিল। একথা বলে সবাইকে কাঁদিয়েছেন তিনি।
এই হত্যাকাণ্ডের পরও অস্ট্রেলীয় সমাজের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করার মতো। বিচারে শাস্তি যা হওয়ার হবে। কিন্তু ‘সন্তানঘাতিনী’ ওয়ারিয়াকে কেউ ঘৃণা করছেন না।
সবাই হা-হুতাশ করে বলছেন, আহা দরিদ্র ছেলেমেয়েদের নিয়ে কতো না কষ্টে ছিলেন ওয়ারিয়া! তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিলে হয়তো এ কাজ করতেন না ওয়ারিয়া, বেঁচে থাকত আটটি শিশু।
ক্রিসমাসের আগে হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ভীষণ নাড়া দিয়েছে প্রতিবেশীদের। নিহত শিশুদের জন্য ফুল, ক্রিসমাসের উপহার আর খেলনায় তারা পাহাড় বানিয়ে ফেলেছেন বাড়িটির আশপাশে!