তারা বলছেন, এটি করা গেলে সীমান্তে ‘হত্যা’ অনেকাংশে কমানো যাবে।
বৃহস্পতিবার অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) কলকাতা চ্যাপ্টারের সেমিনারে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ জয়ীতা ভট্টাচার্য পশু বাণিজ্যের বৈধতা দেওয়ার প্রয়োজনীয় দিক তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে কাঁটা হয়ে আছে সীমান্তে হত্যা। আর অবৈধভাবে পশু আনা-নেওয়ার সময়ই ঘটে অধিকাংশ হত্যার ঘটনা।
ভারতীয় এই বিশেষজ্ঞ বলেন, “সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা যখন পশু চোরাচালানে বাধা দেয়, তখনই অধিকাংশ সংঘর্ষ এবং হত্যার ঘটনা ঘটে। ব্যবসাটি বৈধ করা হলে সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের দুশ্চিন্তা অনেকটাই কমে আসবে।”
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যেকার সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে নিজের ধারণা উপস্থাপন করতে গিয়ে ভূতাত্ত্বিক ও পানি বিশেষজ্ঞ প্রণব রায় বলেন, “ভারতের উত্তারাঞ্চলে গরুর একটি ভালো উৎস আছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে আছে গরুর মাংসের ব্যাপক চাহিদা।”
তিনি প্রশ্ন রাখেন “তাহলে ব্যবসাটিকে বৈধতা দিয়ে বিশাল বাজারের সুবিধা নিতে বাধা কোথায়?”
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার অবৈধ পশু ব্যবসার চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশের গবেষক শামসুল আরেফিন বলেন, “৫০০ মিলিয়ন ডলারের এই বাণিজ্য থেকে দুই দেশের সরকারই রাজস্ব হারাচ্ছে, কারণ এটি অবৈধ।
“এই ব্যবসার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ধর্মীয় আবেগ জড়িত থাকতে পারে, কিন্তু কৃষির কারণেই আমাদের কাছে সব সময়ই গরু বিক্রি করা যাবে।”
এর আগেও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের এক মহাপরিচালক পশু বাণিজ্যের বৈধতা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে সেমিনারে স্মরণ করিয়ে দেন কলকাতার লেখক-সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক।
এটি করা হলে সীমান্তরক্ষীরা মাদক ও অস্ত্র পাচারের মতো অন্যান্য পণ্য চোরাচালান বন্ধে নজর দিতে পারবে বলে তখন বলা হয়েছিল।
“কিন্তু সীমান্তের দুই পাশ থেকেই এই ব্যবসাকে বৈধতা দেওয়ার বিষয়ে শক্ত বাধা আছে।”
সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অধিবেশনের সভাপতি এই প্রবীণ সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশ যে পাকিস্তানের মতো শত্রুভাবাপন্ন নয়, সেটি ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পরিষ্কারভাবে বলতে হবে।
“বাংলাদেশ একটি বন্ধু রাষ্ট্র এবং এই ইতিবাচক ধারণা ভারতের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় প্রতিফলিত হওয়া উচিত।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ভারতের অন্যতম বুদ্ধিজীবী সি রাজামোহন চীনের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আন্তঃসীমান্ত যোগাযোগ স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তার দেশের নীতি নির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “সব বিষয়ে ভারতের একইসঙ্গে দ্রুত রক্ষণাত্মক ও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মতো একই ধরনের সমস্যা ছিল চীনের ইউনান প্রদেশে। এ বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় নেওয়া উচিত। সমস্যার কারণে চীন কিন্তু তার ওই সীমান্ত বন্ধ করে দেয়নি।
“আসাম এবং বাংলার পক্ষ থেকে চাপ থাকলেও মোদি সরকারকে দ্রুত বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি এবং স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে।”
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত অভিন্ন নদীগুলোর অববাহিকা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তার ধারণা তুলে ধরেন।
ওআরএফ কলকাতা চ্যাপ্টারের প্রধান ড. অশোক ধর জানান, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার মতো নীতি নির্ধারণে তার দল সব সময়ই গতানুগতিকতার বাইরে কাজ করতে চায়।
অবশ্য ভারতের সাবেক সেনা প্রধান শংকর রায় চৌধুরী মনে করেন, শাসক দলগুলোর সীমাবদ্ধতার কারণে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
“এক্ষেত্রে আমাদের খুব বেশি কিছু করার নেই। বাংলাদেশে হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসলে আমাদের সম্পর্ক হয়ে যায় আকাশচুম্বী। কিন্তু হাসিনা যেসব সন্ত্রাসীদের ভারতে অনুপ্রবেশ বন্ধ করেছিলেন, খালেদা জিয়া আসলে আমরা আবার তাদের ভারতের মাটিতে দেখি।”
হাসিনা সরকার ভারতের জন্য অনেক কিছু করেছে মন্তব্য করে ভারতীয় সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, “এখন ভারতকে অবশ্যই তিস্তা ও স্থল সীমান্ত চুক্তিসহ সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।”