‘কাউকে যদি ঝোলাতে হয়, এরাই সেই অপরাধী’

দিল্লিতে পাঁচ বছর আগে চলন্ত বাসে প্যারামেডিকেল ছাত্রী ‘নির্ভয়া’কে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে চার আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2017, 07:28 PM
Updated : 9 July 2018, 10:56 AM

আদালত বলেছে, কোনো মামলায় যদি কখনও কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আদেশ দিতে হয়, তাহলে নির্দ্বিধায় এটা সেই মামলা।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ৪২৯ পৃষ্ঠার রায়ে আসামিদের অপরাধের বর্ণনা দিতে গিয়ে ‘ঘৃণ্য’, ‘জঘন্য’ ও ‘পাশবিক’ এর মত শব্দ ব্যবহার করেছেন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারক।

ভারতের একটি দ্রুত বিচার আদালত ২০১৩ সালে ওই চার আসামির ফাঁসির রায় দিলে পরের বছর হাই কোর্টেও তা বহাল থাকে।

চার আসামি অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত ও মুকেশ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার চূড়ান্ত রায়ে বলেছে, মৃত্যুদণ্ডই ওই চার অপরাধীর প্রাপ্য।

এনডিটিভি লিখেছে, রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আদালতকক্ষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। সেই ভিড়ের মধ্যে নীরবে চোখ মুছছিলেন নির্ভয়ার মা, পাশেই ছিলেন মেয়েটির বাবা। 

২৩ বছর বয়সী ওই প্যারামেডিকেল ছাত্রী মৃত্যুর আগে যে জবানবন্দি দিয়ে গেছেন, সে কথাও উল্লেখ করা হয় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে। 

জবানবন্দি গ্রহণকারী পুলিশ কর্মকর্তা ছায়া শর্মাকে ওই তরুণী বলেছিলেন, “যারা আমাকে নির্যাতন করেছে, তাদের ছাড় দেবেন না।”

২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে ফেরার সময় চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী। ছয় পাষণ্ড ধর্ষণের আগে তার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখে। পরে তাদের দুজনকেই চলন্ত বাস থেকে ফেলা দেওয়া হয়।

এর দুই সপ্তাহ পর মারাত্মক আহত ওই ছাত্রী সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

ওই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ভারতজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ছাত্র-জনতা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম মেয়েটির নাম দেয় ‘নির্ভয়া’।

বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে নারীর সুরক্ষা নিয়ে জাতীয় পর্যায়েও বিতর্ক তৈরি হয়। প্রবল বিতর্কের মুখে আইন সংশোধন করে নারী নির্যাতনের জন্য করা হয় সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান।

মামলায় অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে মারা যান। পরে তার নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

দোষী সাব্যস্ত আরেক অপরাধী সে সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিশোর অপরাধীদের জন্য প্রযোজ্য আইনে ২০১৫ সালে তাকে তিন বছরের জন্য সংশোধনাগারে পাঠায় আদালত। আইন অনুযায়ী সেটাই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সর্বোচ্চ সাজা।

শাস্তির মেয়াদ কাটিয়ে ২০১৫ সালে সেই তরুণ মুক্তি পেলে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরপর ধর্ষণের মত গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ বিবেচনা করে বিচারের আইন হয় ভারতে।

চূড়ান্ত রায়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এ মামলার আসামিদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যে বর্বরতা তারা দেখিয়েছে, তা যেন এ পৃথিবীর কোনো ঘটনা নয়।

“তারা যেন মেয়েটির জীবন ধ্বংস করারই পণ করেছিল। মেয়েটিকে তারা ব্যবহার করেছে লালসার বস্তু হিসেবে। তারপর নগ্ন, রক্তাক্ত অবস্থায় ওই তরুণী ও তার বন্ধুকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তাদের পিষে মারার চেষ্টা করেছে আসামিরা।”

নির্ভয়ার জবানবন্দি নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা ছায়া শর্মা এখন কাজ করছেন ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে।

তিনি বলেছেন, সেদিন হাসপাতালে নির্ভয়া তার ধর্ষণের ঘটনার জন্য কাঁদেননি। দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি ঘটনার বিবরণ দিয়ে গিয়েছিলেন বলেই বিচার পাওয়া সম্ভব হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডের চার আসামির সাজা সুপ্রিম কোর্টেও বহাল থাকায় এখন তাদের সামনে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার ‍সুযোগ থাকছে।