মমতার সঙ্গে কথা বলেই তিস্তা চুক্তি: দিল্লি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সই করার আগে তার সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হবে।

ভারত প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2017, 07:21 AM
Updated : 25 March 2017, 07:22 AM

তিস্তার পানি বণ্টনে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি ঝুলছে গত ছয় বছর ধরে;  শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের আগে এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা চলছে।

দিল্লিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতাকে বৈঠকে বসানোর একটি পরিকল্পনার কথা সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানানোর পর বৃহস্পতিবার এক টিভি অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, তাকে এসব বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।

মমতা বলেন, “আমি তো শুনছি ২৫ মে নাকি বাংলাদেশে গিয়ে তিস্তা চুক্তি হবে। অথচ আমি এখনও কিচ্ছু জানি না।”

তার প্রতিক্রিয়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বোগলে এক বিবৃতিতে তার দেশের রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের আগে পশ্চিমবঙ্গসহ তিস্তা বিষয়ক সব অংশীদারের সঙ্গেই আলোচনা করা হবে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ফেডারেল শাসন ব্যবস্থার চেতনা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ সঠিক সময়ে সবার সঙ্গেই আলোচনা করবে।” 

তবে কখন ও কী প্রক্রিয়ায় এ আলোচনা হবে, তা স্পষ্ট করেননি বোগলে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭ এপ্রিল ভারত সফরে যাচ্ছেন। তার এই সফরে ভারতের সঙ্গে কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই হওয়ার কথা থাকলেও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, এই সফরে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা অনিশ্চিত।

তবে মমতার বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে শেখ হাসিনার সফরে চুক্তি না হলেও তিস্তা নিয়ে ফয়সালা চূড়ান্ত হতে পারে।

নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ফাইল ছবি)

এ ধরনের যে কোনো চুক্তির আগে রাজ্যের স্বার্থকে বিবেচনায় নিতে হবে মন্তব্য করেন তৃণমূলপ্রধান মমতা।

“তোমরা যদি সবকিছু রেডি করে আমাকে বলো স্ট্যাম্প মারার জন্য, স্যরি! আমাকে রাজ্যের স্বার্থ দেখতে হবে। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। বাংলাদেশকে যতটা হেল্প করার আমি করব, তবে রাজ্যকে বাঁচিয়ে।”

তিস্তা চুক্তি বিষয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকার রাজ্যকে কিছুই জানাচ্ছে না বলে অভিযোগ কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির কট্টর সমালোচক মমতা।

শেখ হাসিনার সঙ্গে ‘সুসম্পর্কের’ কথা তুলে ধরে মমতা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে তার আগ্রহের কমতি নেই।

“শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক খুব ভালো। পার্সোনাল সম্পর্ক ভালো, রাজনৈতিক সম্পর্কও বেশ ভালো। যদি ভালো না হতো তাহলে ছিটমহলটা আমরা করে দিলাম, ৬৬ বছরে যেটা হয়নি।”

২০১৫ সালে ঢাকা সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

“কিন্তু সব তো আর পাওয়া যায় না। যেখানে রাজ্যের স্বার্থ জড়িত আছে, সেখানে রাজ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেখানে আমি পারব এবং সেটা দুই দেশেরই ভালো হবে, সেটা আমি করে দেব।”

২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও মমতার আপত্তিতে সেবার তা আটকে যায়।

এরপর বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ২০১৫ সালে ঢাকা সফরে এলেও সেই জট খোলেনি। আশ্বাস দিয়েই বিদায় নিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকে ঝুলছে এই চুক্তি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনেই শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতাকে বসাতে চান মোদী।

মোদীর চেয়ে প্রণব ও সুষমার সঙ্গে মমতার সম্পর্ক ভালো বিবেচনায় তিস্তা নিয়ে ‘ডেডলক’ ভাঙতে কেন্দ্রীয় সরকার এই শেষ চেষ্টা করছে বলে বিজেপির এক সূত্র জানিয়েছে।