কলকাতায় বিজেপি কার্যালয়ে তৃণমূল ছাত্রপরিষদের হামলা, সংঘর্ষ

পশ্চিমবঙ্গের রোজভ্যালি কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করার পর কলকাতায় বিজেপি কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে তৃণমূল ছাত্রপরিষদের কর্মীরা; দুই পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ।

ভারত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2017, 02:27 PM
Updated : 3 Jan 2017, 03:22 PM

মঙ্গলবার রোজভ্যালি দুর্নীতি মামলায় চার ঘণ্টার বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদ করার পর লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপকে গ্রেপ্তার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব‌্যুরো (সিবিআই)। তাপস পালের পর সুদীপ হলেন দ্বিতীয় তৃণমূল নেতা, যাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হল।

রোজভ্যালি পশ্চিমবঙ্গের সারদা কেলেঙ্কারির মতই আরেকটি ঘটনা, যেখানে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহের পর সাধারণ গ্রহকদের ১৭ হাজার কোটি রুপি মেরে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুকে এরই মধ‌্যে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই।

রোজভ্যালির প্রচারের বিনিময়ে আর্থিক ও অন‌্যান‌্য সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তৃণমূলের এমপি সুদীপের বিরুদ্ধে।

ভারতীয় সংবাদমাধ‌্যমগুলো জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকালে তার গ্রেপ্তারের খবর পাওয়ার পরপরই রাস্তায় নামে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা। এরপর তারা মুরলীধর সেন লেইনে বিজেপির সদর দপ্তরে হামলা করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে।

এপি আনন্দ জানিয়েছে, বিজেপি সমর্থকদের ধাওয়ায় ছাত্র পরিষদ কর্মীরা পিছিয়ে গেলেও পরে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তারা ফিরে আসে এবং বিজেপি কার্যালয়ের দিকে ঢিল ছুড়তে থাকে। বিজেপি কর্মীরাও পাল্টা জবাব দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ।

পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে নিলেও সেখানে থমথমে পরিস্থিত বিরাজ করছে বলে আনন্দবাজার জানিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিরোধীদলের মুখ বন্ধ করতে’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তার করাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “আমরা খুবই প্রতিহিংসাপরায়ণ একজন প্রধানমন্ত্রীর শিকার, যিনি দমনপীড়নের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংস করেছেন। এখন তিনি সব বিরোধীদলের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।”

ভারতের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ প্যাটেল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মমতাকে ডেকে পাঠান। তবে তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে সে বিষয়ে এখনো পরিষ্কার হওয়া যায়নি।

এদিকে তৃণমূল ছাত্রপরিষদের হামলার পর কলকাতা পুলিশ বিজেপির আঞ্চলিক সদরদপ্তরটি ঘিরে রেখেছে।

বিজেপির মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, সংঘর্ষে তাদের অন্তত ২০ জন কর্মী এবং কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছে।

বিজেপির পক্ষ থেকে তাদের কলকাতার কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েনের দাবিও করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর কলকাতার মধ্যাঞ্চলে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সড়কগুলো থেকে গণপরিবহন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

দলীয় নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানাতে ৯ জানুয়ারি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের  সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন মমতা।

ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, “মোদীকে চলে যেতে হবে। তিনি দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন।”

অন্যদিকে বিজেপি বাংলার মুখপাত্র সিদ্ধার্থ নাথ সিং বলেন, আইন তার নিজ গতিতে চলবে।

তিনি বলেন, “তৃণমূল নেতারা বেআইনি অর্থলগ্নি কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। যেখানে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ অর্থ বেহাত হয়েছে। যদি প্রয়োজন পড়ে তবে আরও নেতাদের গ্রেপ্তার করা হবে। কারণ আইন সবার জন্যই সমান।”

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজন মন্ত্রীসহ তৃণমূলের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং শতশত সমর্থক সল্ট লেকে সিবিআই এর কার্যালয়ের সামনে জড় হন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিবিআইর একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাপস পালের মত সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও উড়্যিষায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রোজভ্যালি মামলায় বুধবার সেখাকার আদালতে তাকে হাজির করা হবে।

সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে দোষীসাব্যস্ত হওয়ায় মমতার মন্ত্রিসভার সদস্য মদন মিত্র কারাগারে রয়েছেন।

ওই মামলায় তৃণমূলের বেশ কয়েকজন এমপি ও মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।