রুপির বড় নোট বাতিল: বিপাকে বাংলাদেশি রোগীরা

৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের ভারতের আকস্মিক সিদ্ধান্তের কারণে সেখানে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শত শত বাংলাদেশি মারাত্মক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।

ভারত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Nov 2016, 08:21 AM
Updated : 10 Nov 2016, 11:38 AM

মঙ্গলবার জাতিকে হতবাক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে রুপির বড় এই দুটি নোট বাতিল করে অবিলম্বে তা কার্যকর করার ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, জাল নোট, কালো টাকা ও দুর্নীতি ঠেকাতে তার হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না।

অনেকেই এটাকে ভারতের ‘সমান্তরাল অর্থনীতির’ বিরুদ্ধে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হিসেবে বর্ণনা করলেও এই সিদ্ধান্ত সাধারণ ভারতীয়দের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে মোদীবিরোধীরা সমালোচনা করছেন।

এই ঘোষণার পর ৫০০ ও ২,০০০ রুপির নতুন নোট বোঝাই করার জন্য বুধবার সবগুলো ব্যাংক ও এটিএম বুধ বন্ধ রাখা হয়। ওই সময়ের মধ্যে ১০০ রুপি ও এর নিচের নোটগুলো বৈধ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয়দের পাশাপাশি এখানে চিকিৎসার জন্য আসা বাংলাদেশিরা বিপদে পড়েছেন। এর মধ্যে ক্যান্সারসহ জটিল সমস্যার অনেক রোগীও রয়েছেন।

এসব রোগীদের আত্মীয়রা বলছেন, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় বড় অংকের অর্থ বহনের সুবিধার্থে তারা বাংলাদেশি টাকা বা ডলার বদলে ৫০০ ও ১০০০ রুপির ভারতীয় উচ্চমূল্যের এসব নোট নিয়েছেন।

যশোর থেকে আসা শেখ মনসুর আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের রোগীরা যেসব বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছেন সেখানে এসব গ্রহণ করা হচ্ছে না।”

আগের নোট বাতিল করে নতুন চালু করা ৫০০ রুপির এই নোটের ছবি ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।

তার ভাই শেখ মোদাচ্ছের আলী কিডনি সমস্যা নিয়ে দক্ষিণ সাউথ ক্যালকাটা হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

“হাসপাতাল বলছে, তারা শুধু ১০০ রুপির নোট গ্রহণ করবে। ওই নোট আমার কাছে মাত্র কয়েকটা রয়েছে,” বলেন মনসুর।

ঘোষণার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল ও ফার্মেসিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে পুরনো ওই দুই নোট গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

এই সময়ের মধ্যে বিদেশি নাগরিকরাও বিমানবন্দর থেকে তাদের কাছে থাকা ৫০০ ও ১০০০ রুপির পুরনো নোট বদলে সর্বোচ্চ ৫০০০ রুপি নিতে পারবেন।

দীর্ঘ মেয়াদে ভারতীয়রা বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে ১০ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক বা পোস্ট অফিসে ৫০০ ও ১০০০ রুপির পুরনো নোট জমা দিয়ে দিনে সর্বোচ্চ ৪,০০০ রুপি তুলে নিতে পারবেন।

মনসুর বলেন, “বিদেশিরা ডলার বা অন্য কোনো মুদ্রা বদলে নিতে পারে। কিন্তু আমি গত সপ্তাহে ভাইকে নিয়ে আসার সময় ডলার ও টাকা ভারতীয় উচ্চমূল্যের নোটে বদলে নিয়েছি।”

তবে মনসুর ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য মোটা অংকের অর্থ আগেই হাসপাতালে জমা দেওয়ায় কিছুটা রক্ষা; চিকিৎসা বন্ধ হয়নি।

“কিন্তু আমি চিন্তায় আছি, যখন হাসপাতাল চূড়ান্ত বিল দেবে তখন কি হবে তা নিয়ে।”

তবে সবাই তার মতো সৌভাগ্যবান নয়; ক্যান্সারে আক্রান্ত সায়মা শারমিনের কথাই ধরা যাক।

তিনি সীমান্ত পার হওয়ার সময় চেকপোস্টেই বাংলাদেশি টাকা ভারতীয় রুপিতে বদলে নিয়েছেন। এখন তিনি ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন।

শারমিনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি টিভি চ্যানেল বলছে, কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কেমোথেরাপি নিতে এসেছেন তিনি।

৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল করে নতুন চালু করা ২০০০ রুপির এই নোটের ছবি ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।

টাটা ক্যান্সার হাসপাতাল পুরনো নোট নিতে রাজি না হওয়ায় চিকিৎসা ছাড়াই তাকে দেশে ফিরতে হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত। দেশে চিকিৎসা সুবিধা ভাল না হওয়ায় আমি পশ্চিমবঙ্গে এসেছি। আমার জরুরি ভিত্তিতে কেমেোথেরাপি নেওয়া প্রয়োজন। নির্দিষ্ট বিরতিতে আমি যে চিকিৎসা নেই তার উপর নির্ভর করছে আমার বেঁচে থাকার সুযোগ।

“হাসপাতাল চায় ১০০ রুপির নোট। কিন্তু আমিতো সব টাকার বদলে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিয়েছি। আমাকে চিকিৎসা না নিয়েই দেশে ফিরতে হবে।”

শারমিনের মতো আরও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিকেও চিকিৎসার বিকল্প খুঁজতে দেশে ফিরতে হচ্ছে।

৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট গ্রহণের সরকারের নির্দেশ মানছে শুধু সরকারি হাসপাতালগুলো; আর বেসরকারিগুলো রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে।

প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশি উন্নত চিকিৎসা ও নিয়মিত চেক-আপের জন্য ভারতে আসেন। তাদের অনেকেরই বাড়ি কলকাতার কাছাকাছি হওয়ায় এই সুযোগ নেন তারা।

কলকাতার হাসপাতালগুলো বলছে, তাদের একটা বড় রাজস্ব বাংলাদেশি রোগীদের কাছ থেকে আসে।

এই সব হাসপাতাল উচ্চমূল্যের ভারতীয় নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ।