তার মুখপাত্র শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে সৃষ্টি সাম্প্রতিক উত্তেজনা, বিশেষ করে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের সেনা ঘাঁটিতে হামলার পর লাইন অব কন্ট্রোলে অস্ত্রবিরতি ভঙ্গ হওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বান কি-মুন দুই পক্ষকেই সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
“পাকিস্তান ও ভারত সরকারকে কাশ্মির সমস্যাসহ অন্যান্য বিরোধের বিষেয়গুলো আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মহাসচিব বলেছেন, দুই পক্ষ চাইলে তার কার্যালয় মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত রয়েছে,” বলেন মুখপাত্র।
বান কি-মুনের এই আহ্বানের পর ভারত বা পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বরং শনিবার ভোরেও কাশ্মির সীমান্তে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় চার ঘণ্টা গোলাগুলি হয়েছে বলে পাকিস্তানি গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
পাকিস্তান আইএসপিআর এর বরাত দিয়ে দেশটির অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কাশ্মীর সীমান্তের ভিম্বার সেক্টরে ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত গোলাগুলি চলে।
তবে কারও হতাহত হওয়ার কোনো তথ্য পাকিস্তানের পত্রিকায় আসেনি। গোলাগুলির বিষয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীরও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দুই সপ্তাহ আগে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উরি এলাকায় একটি সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় ১৮ ভারতীয় সেনা নিহত হন।
ভারত ওই ঘটনার জন্য পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গিদের দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান তাদের কোনো দায় থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে।
উরির ঘটনার পর বৈরী ভাবাপন্ন প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের কয়েক কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে জঙ্গিদের আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে।
জবাবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতের অভিযানের দাবি ‘বিভ্রান্তিমূলক’। সীমান্তে যা ঘটেছে, তাকে ‘দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি’, এবং তাতে ১৪ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে এবং একজন জীবিত ধরা পড়েছে বলে দাবি করা হয় পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের খবরে।
এরপর ভারতের পক্ষ থেকেও পাকিস্তানের ওই দাবিকে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ বলা হয়।
এই উত্তেজনার মধ্যে দুই দেশেই সীমান্ত থেকে বেসামরিক লোকজন সরিয়ে নেওয়ার এবং সামরিক মহড়ার খবর পাওয়া গেছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে স্বাধীন হওয়া ভারত ও পাকিস্তান এ পর্যন্ত চারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছাড়া প্রতিবারই বিবাদের কেন্দ্রে ছিল কাশ্মির সমস্যা।
কশ্মিরের এলওসিতে অস্ত্রবিরতি বজায় রাখতে ২০০৩ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি হলেও দুই পক্ষই তা লঙ্ঘন করেছে বহুবার।