মহাশ্বেতা দেবীর জীবনাবসান

পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক ও অধিকার আন্দোলন কর্মী মহাশ্বেতা দেবী আর নেই। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2016, 10:43 AM
Updated : 28 July 2016, 11:51 AM

বৃহস্পতিবার বিকালে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহাশ্বেতা দেবী কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

মুণ্ডা বিদ্রোহের পটভূমি নিয়ে লেখা মহাশ্বেতার উপন্যাস ‘অরণ্যের অধিকার’ ১৯৭৯ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পায়। সাহিত্যে অবদানের জন্য ভারত সরকার ২০০৬ সালে তাকে দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণে ভূষিত করে।

তার লেখা শতাধিক উপন্যাসের মধ্যে হাজার চুরাশির মা, অগ্নিগর্ভ, চোট্টি মুণ্ডা এবং তার তীর, আঁধারমানিক, বেনে বৌসহ অনেকগুলো বাংলাদেশের পাঠকমহলেও আলোচিত।

কল্লোল যুগের সাহিত্যিক মনীশ ঘটকের মেয়ে মহাশ্বেতা দেবীর জন্ম ১৯২৬ সালে বাংলাদেশের ঢাকায়। বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক তার চাচা।

দেশভাগের পর মহাশ্বেতার পরিবার বাংলাদেশ থেকে চলে যায় ভারতে। বিশ্বভারতীতে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ করার পর তিনি বিজয়গড় কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে লেখালেখি হয়ে ওঠে তার ধ্যানজ্ঞান। সেই সঙ্গে আদিবাসী এবং নারী অধিকার নিয়ে কাজের জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।

তার লেখায় সমাজের প্রান্তজনের কথা এসেছে বার বার। নৃত্য-সংগীতশিল্পীদের নিয়ে তিনি লিখেছেন মধুরে মধুর,নটী; সার্কাসের শিল্পীদের জীবন নিয়ে লিখেছেন প্রেমতারা। যমুনা কী তীর, রূপরাখা, বায়োস্কোপের বাক্স উপন্যাসেও এসেছে শিল্পে সহচার্যে আসা মানুষের প্রান্তিক জীবনের কথা।

রাজনীতি ও ইতিহাসের মিশেলে মহাশ্বেতা ঝাঁসির রানীর স্বাধীনতা সংগ্রামের গল্প লিখেছেন ‘ঝাঁসী কি রানী’ উপন্যাসে। নকশাল আন্দোলনের পটভূমিতে তার লেখাগুলো সে সময় দুই বাংলায় দারুণ সাড়া ফেলে। পরবর্তী জীবনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিল্পনীতি এবং কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে কারখানা করার পরিকল্পনা নিয়েও লেখার মধ্য দিয়ে সরব ছিলেন তিনি।

বাম ঘরানার এই লেখক মুণ্ডা ও সাঁতালদের সংগ্রামী জীবন নিয়ে যেমন লিখেছেন, তেমনি লোধা, শবরসহ বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য জীবনভর সংগ্রাম করে গেছেন তিনি।

মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাস ইংরেজি, জার্মান, ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ভারতের জ্ঞানপীঠ এবং ফিলিপিন্সির র্যা মন ম্যাগসাইসাইসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

এই সাহিত্যিকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক টুইটে বলেছেন, “ভারত এক মহান লেখিকাকে হারাল। গর্ব করার মতো এক মাকে হারাল বাংলা। আমি আমার অভিভাবককে হারালাম। তার আত্মার শান্তি কামনা করি।”

মহাশ্বেতা দেবীর প্রথম স্বামী ছিলেন নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্য। তাদের সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্যও একজন সাহিত্যিক।

মহাশ্বেতা দেবী তার জন্মস্থান বাংলাদেশে এসেছিলেন ২০০৯ সালে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি। 

সে সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সম্পর্কে ‘সাম্প্রদায়িক’ শব্দটা উচ্চারণ করাই অপরাধ। সেই করবে- যে জানে না। বাংলাদেশকে বিশেষ করে আমি কেন অসাম্প্রদায়িক বলব, আমরা তো জানিই। বাঙালি বাঙালিই। মূলে, নিম্নবর্গে কোনো সম্প্রদায় ভেদাভেদ নেই।”