বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে রাজ্য সরকার পুরনো একটি আইন ‘সংশোধন’ করে সংরক্ষিত গাছের তালিকা থেকে ‘নারিকেল গাছ’কে বাদ দিয়েছে।
নতুন এই আইন হওয়ায় গোয়ায় নারিকেল গাছ কাটতে আর আগের মতো বনবিভাগের অনুমতি নিতে হবে না।
আইনটির পক্ষে গোয়ার পরিবেশ মন্ত্রী রাজেন্দ্র আর্লেকারের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যও বেশ আলোচিত হচ্ছে।
আর্লেকার বলেছেন, উদ্ভিদবিদ্যা অনুযায়ী নারিকেল গাছকে ‘গাছ’ বলা যায় না, কারণ এতে কোনো ‘শাখা’ নেই।
অবশ্য পরিবেশবিদরা গোয়া সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের ভাষ্য, রিয়েল এস্টেট ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই সরকার এই ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্তের দিকে ঝুঁকেছে।
‘আগের আইনে দুই হেক্টরের বেশি জমিতে গাছ কাটতে বাধা ছিলো, যার ফলে চাষের জমি ও পাহাড়ি অঞ্চলে বড় ধরনের নির্মাণ সম্ভব হচ্ছিল না। নতুন আইনে সেই বাধা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে’, বলেন গোয়ার পরিবেশবিদ ক্লাউড আলভারেজ।
আলভারেজের পরিবেশ সংগঠন ‘গোয়া ফাউন্ডেশন’ এর আগেও সরকারের বেশ কয়েকটি প্রকল্পকে আদালতে নিয়ে গিয়েছিল, যেগুলোকে ‘পরিবেশের জন্য হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
নতুন আইনের পর সাধারণ মানুষও সরকারের উপর ‘ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে’ বলে মন্তব্য করেন আলভারেজ।
এর ফলে ব্যাপকহারে ‘নারিকেল গাছ নিধনের’ যে আশঙ্কা পরিবেশবিদরা করছেন, তা অমূলক।
নারিকেল গাছ গোয়ায় ‘কালপাভরিকশা’ বা ‘স্বর্গের গাছ’ নামে পরিচিত। ওই রাজ্যে এটি এতই জনপ্রিয় যে স্থানীয় কোঙ্কানি ভাষায় এর ৫০টি আলাদা প্রতিশব্দ আছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
পরিবেশবিষয়ক অনুসন্ধানী বই ‘ফিশ কারি এন্ড রাইস’কে উদ্ধৃত করে বিবিসি বলছে, গোয়াবাসীদের কাছে এ গাছের কদর কেবল অর্থনৈতিক নয়, পবিত্রও। বিপদে না পড়লে তাদের কেউই নারিকেল গাছ কাটেন না।
গেল ডিসেম্বরে গোয়ার সরকার প্রথমবার সংরক্ষিত তালিকা থেকে ‘নারিকেল গাছকে বাদ দেয়ার’ ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিকভাবে বিরোধীদল এবং পরিবেশবিদরা এর প্রতিবাদ জানায়। ‘সরকারি ওই ইচ্ছা’র বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরাও।
তারা বন ও পরিবেশ ধ্বংসের জন্য সরকারকে দায়ী করে নানান কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে ছিল ১৯৭০ এর ‘চিপকো আন্দোলনের’ অনুসরণে ‘নারিকেল গাছকে জড়িয়ে ধরে’ গাছ বাঁচানোর প্রচারণাও।